World News - গণভোটে অংশ নিতে পারবে না মুসলমানরা




মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট থেইন সেইন উগ্র বৌদ্ধদের পক্ষ থেকে তীব্র চাপের মুখে রয়েছেন। দেশের সংবিধান সংশোধনের যে সিদ্ধান্ত তিনি নিয়েছিলেন সেখানে নির্বাচনে মুসলমানদের উপস্থিতি ও অংশগ্রহণের বিধান রাখা হয়েছিল। কিন্তু ওই সংশোধনীর বিরুদ্ধে সেদেশের উগ্র বৌদ্ধরা ব্যাপক বিক্ষোভ করায় থেইন সেইন তার সিদ্ধান্ত পাল্টাতে বাধ্য হয়েছেন। শেষ পর্যন্ত নিজের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন। এই ঘটনা থেকে বোঝা যায় মিয়ানমার সরকার সেদেশের উগ্র বৌদ্ধদের পক্ষ থেকে তীব্র চাপের মুখে রয়েছেন।
খবরে বলা হয়, মিয়ানমারের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের সাময়িক আইডি কার্ড বা হোয়াইট কার্ড দেয়ার যে বিধান চালু করা হয়েছিল ওই কার্ডের মেয়াদ আসছে মার্চ মাস পর্যন্ত থাকবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে। প্রেসিডেন্টের এই ঘোষণা প্রমাণ করছে তিনি উগ্র বৌদ্ধদের কাছে কতোটা দুর্বল। উল্লেখ্য, কয়েক লাখ রোহিঙ্গা মুসলমান এই অস্থায়ী পরিচয় পত্র বা হোয়াইট আইডি কার্ড পেয়েছিল। পার্লামেন্টে গৃহীত প্রস্তাব অনুযায়ী যারা ওই কার্ডধারী তারা সংবিধান সংশোধনের জন্য আয়োজিত গণভোটে রায় দিতে পারবে। কিন্তু সরকার এখন ওই কার্ডের মেয়াদ কমিয়ে আনার কারণে তারিখ অঘোষিত ওই গণভোটে অংশগ্রহণের সুযোগ থাকলো না মুসলমানদের জন্য। থেইন সেইনের এই সিদ্ধান্তটা মিয়ানমারের পূর্ববর্তী সরকারের সিদ্ধান্তের বিপরীত। কেননা আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রোহিঙ্গা মুসলমানদের যারা হোয়াইট কার্ডের অধিকারী ছিল তারা নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারতো। আগের আদেশ বাতিল ঘোষণা করে মিয়ানমারের বর্তমান সরকারের এই সিদ্ধান্তটা গৃহীত হয়েছে সেদেশের উগ্র বৌদ্ধদের বিক্ষোভের পর। তারা নির্বাচনে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ভোট দেয়ার অধিকারের তীব্র বিরোধিতা করেছে।
গেল দুই বছরে মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলে উগ্র বৌদ্ধদের হামলায় কয়েক হাজার মুসলমান নিহত ও গৃহহীন হয়েছে। ১৯৭৮ সাল থেকে মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় মুসলমানরা সেদেশের সামরিক বাহিনীর মাধ্যমে নির্যাতিত হয়ে আসছে। সর্বশেষ উগ্র বৌদ্ধরা সেনাবাহিনীর সহায়তায় রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর অকথ্য হত্যাযজ্ঞ চালায়। গত তিন বছর তারা মংডু নামে একটি গ্রামে নৃশংস হামলা চালায় মুসলমানদের ওপর। অন্তত চার হাজার মুসলমান অধ্যুষিত এই গ্রামটিকে উগ্র বৌদ্ধরা পুরোপুরি মানব শূন্য করে ফেলেছে। মানবাধিকার সংগঠনের কর্মীরা ওই নৃশংস আক্রমণকে বংশ নিধনযজ্ঞ বলে অভিহিত করেছে। ওই গ্রামটির শতকরা নব্বই ভাগ মানুষ ছিল রোহিঙ্গা মুসলমান।
মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় তথা রোহিঙ্গা মুসলমানরা এখন ন্যূনতম মানবীয় অধিকার তথা নাগরিক অধিকার থেকেও বঞ্চিত। সংবিধান সংস্কারের নামে মিয়ানমার সরকার মুসলমানদের ব্যাপারে নতুন যেসব আইন বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছিল তাও উগ্র বৌদ্ধদের চাপের মুখে ভেস্তে গেছে।
জাতিসংঘ সম্প্রতি উদ্বেগ ও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছে, মিয়ানমারের জটিল কিছু আইন-কানুন বাস্তবায়ন করা হলে দেশে বংশ ও জাতিগত উত্তেজনা দেখা দেবে। এসব আইনের ফলে বিভিন্ন ফের্কার মধ্যে বিয়ের ক্ষেত্রে এক ধরনের সীমাবদ্ধতা দেখা দেবে। ধর্ম পরিবর্তনসহ সন্তান জন্ম দেয়া তথা জনসংখ্যার ক্ষেত্রেও সীমাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে। একইভাবে নির্বাচনে রোহিঙ্গা মুসলমানরা অংশ নিতে পারবে না। এসব কারণে মিয়ানমার সরকার চেয়েছিল জনমতের চাপের মুখে রোহিঙ্গা মুসলমানদেরকে সাদা কার্ড দিয়ে তাদেরকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার সাময়িক একটা ব্যবস্থা করতে। কিন্তু উগ্র বৌদ্ধদের বিদ্রোহের মুখে সেই সিদ্ধান্ত থেকেও সরকার সরে এলো। মিয়ানমার সরকার মুসলমানদেরকে যে কার্ড দিতে চেয়েছিল সেই কার্ড পেতে হলে রোহিঙ্গা মুসলমানরা নিজেদেরকে বাংলাদেশী অর্থাৎ বিদেশি বলে পরিচয় দিতে হতো। ফলে এই কার্ড দেয়ার ক্ষেত্রেও সরকারের উদ্দেশ্যটা সন্দেহের ঊর্ধ্বে নয়। অথচ এই রোহিঙ্গা মুসলমানরা দ্বিতীয় হিজরি থেকে মিয়ানমারের অধিবাসী।
-

Latest

Popular Posts

Popular Posts

Popular Posts