‘বার্ডম্যান
বোরড মি টু ডেথ’। সোজা বাংলায় ‘বার্ডম্যান দেখে বিরক্তির চোটে মারাই
যাচ্ছিলাম’। অস্কার থেকে গোল্ডেন গ্লোব। যে ছবি হলিউডের বড় বড় পুরস্কার
আসর কাঁপাচ্ছে, সেই ছবি নিয়ে এমন সাংঘাতিক কথা! আবার লিখেছেন কিনা খোদ
একাডেমিরই (একাডেমি অব মোশন পিকচার আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেস) একজন
সম্মানিত সদস্য। তাঁর এই ফাঁস হয়ে যাওয়া মন্তব্য নিয়েই কদিন আগে খবর ছেপেছে
গার্ডিয়ান পত্রিকা। ইনারিতুর ছবি ‘বোরিং’? বিশ্বাস করা শক্ত। বার্ডম্যান,
দি আনএক্সপেক্টেড ভার্চু অব ইগনোরেন্স দেখতে বসে বুঝতে পারি, কথা খুব
মিথ্যে নয়। কোথায় ইনারিতুর সুবিখ্যাত সেই ‘হাইপার লিংক’। কোথায় কাহিনির
দুর্দান্ত গতি আর অপ্রত্যাশিত মোচড়। তার জায়গায় সুদীর্ঘ সংলাপ। অবিশ্বাস্য
লম্বা সব ‘টেক’। স্বপ্নদৃশ্য বাদ দিলে ক্যামেরা প্রায় পুরোটা সময়
ঘোরাফেরা করে একটা থিয়েটারের ভেতরেই। প্রথম দেখায় ইনারিতুর পুরোনো
ভক্তরা ভড়কে গেলে দোষ দেওয়া যায় না।
ইনারিতু-ভক্তদের অবশ্য আরও একটা বিষয় ভাবতে হবে। বাবেল কিংবা আমোরেস পেরোস ইনারিতুকে দুনিয়াজোড়া খ্যাতি দিয়েছে। কিন্তু মেক্সিকোর এই বিস্ময়ের কাছে অল্পের জন্য অধরাই রয়ে গেছে অস্কারের সোনালি মূর্তি। এমনকি প্রথম মেক্সিকান হিসেবে অস্কার জয়ের ইতিহাসও রচিত হয়ে গেছে গেল বছর। ইতিহাসটা গড়েছেন ইনারিতুরই বন্ধু আলফনজো কিউরন। গ্র্যাভিটির সুবাদে সেরা পরিচালকের অস্কার হাতে উঠেছে কিউরনের। এবারে হলিউড মুলুকে বার্ডম্যান-এর বিপুল বিজয় ইনারিতুর পুরোনো পাওনা ছিল। কিন্তু কী আছে বার্ডম্যান-এর এই একচ্ছত্র বিজয়ের মূলে?
বার্ডম্যানের ভূত
কোনো এক অজানা অমঙ্গল আশঙ্কায় চারপাশ থমথমে। মেঘলা আকাশ। পৃথিবীর বুকে নেমে আসছে এক আশ্চর্য উল্কা। এই বিচিত্র স্বপ্নদৃশ্য দিয়ে ছবির শুরু। ঝট করে স্বপ্নের ঘোর কেটে গেলে আমরা এককালের সুপারহিরো রেগান থমসনকে (মাইকেল কিটন) দেখি তার ড্রেসিংরুমে। ধ্যানরত এবং শূন্যে ভাসমান। ঝিমিয়ে পড়া ক্যারিয়ার চাঙা করতে মরিয়া রেগান। ব্রডওয়ের মঞ্চে সে ফিরে এসেছে আরও একবার ঝড় তুলতে। রেগান সবাইকে দেখিয়ে দিতে চায়, সে কতটা পারে। মাইক নামের বেয়াড়া সহ-অভিনেতাকে একটা শিক্ষা দিতে চায় রেগান। সমুচিত জবাব দেওয়া দরকার পত্রিকার সেই সমালোচনা লেখককেও, যে তার মুখের ওপর বলেছে ‘তুমি অভিনেতা নও, শুধুই একটা তারকা!’ ভেতর থেকে তাড়না দিতে থাকে তারই অভিনীত সুপারহিরো চরিত্র বার্ডম্যান। বার্ডম্যানরূপী এই অহং রেগানকে তাড়া করে ছবির একদম শেষ অবধি।
দুর্দান্ত অ্যাকশন দৃশ্য নয়। মনের ভেতরকার রাগ আর তীব্র অহমিকার কথা বলে বার্ডম্যান। ইনারিতুর অন্য সব আলোচিত ছবির মতো কাহিনির ঘনঘটা আর পটভূমির বিশালত্ব নয়, বার্ডম্যান বরং ভিন্ন ধারার এক উত্তেজনার জন্ম দেয়। ইনারিতুর অন্য সব ‘মাস্টার পিস’-এর মতো বার্ডম্যানও ‘আনপ্রেডিক্টেবল’, যেখানে অনুমান করা কঠিন, ছবির পরের দৃশ্যে ঠিক কী ঘটতে যাচ্ছে। খ্যাতির তলানিতে ঠেকে যাওয়া এক অভিনেতার ভেতরকার অহংবোধের খেলা আসলে পুরো সিনেমা-দুনিয়ার পর্দার পেছনের এক অধ্যায়। বড় তারকাদের নিয়ে হরদম ছবি হয়। কিন্তু একজন ঝিমিয়ে পড়া তারকার মানসিক জটিলতার গভীরে এমন অনায়াসে ডুব দিতে পারেন সম্ভবত একজনই। তিনি আলেহান্দ্রো গনজালেস ইনারিতু।
এ সপ্তাহের ৮৭তম অস্কার আসরে সেরা ছবি, সেরা চিত্রনাট্য আর সেরা নির্মাতার বাইরে বার্ডম্যান আরও একটি বিভাগে সেরার পুরস্কার জিতেছে; সেটি সিনেমাটোগ্রাফি। ছবিতে অবিশ্বাস্য দীর্ঘ সব লং টেক চোখে পড়ার মতো। শটের মাঝখানে ‘কাট’ বলতে গেলে নেই। ক্যামেরা যেন এক যান্ত্রিক অক্টোপাস। ঘুরে, প্যাঁচ খেয়ে, কখনো হাওয়ায় ভেসে সেটি বারবার পিছু ধাওয়া করেছে চরিত্রের।
বার্ডম্যান আমাদের চেনা সুপারহিরো-টাইপ ছবি নয়। এর সঙ্গে ব্যাটম্যান কিংবা সুপারম্যান ঘরানার মারদাঙ্গা সুপারহিরো ছবির মিল নেই। বার্ডম্যান সুপারহিরোর ছবি নয়, বরং সুপারহিরোকে নিয়ে ছবি। দ্য টেলিগ্রাফ যাকে বলেছে ‘ডার্ক নাইট অব দ্য সোল’ বা ‘আত্মার ডার্ক নাইট’।
ইনারিতু-ভক্তদের অবশ্য আরও একটা বিষয় ভাবতে হবে। বাবেল কিংবা আমোরেস পেরোস ইনারিতুকে দুনিয়াজোড়া খ্যাতি দিয়েছে। কিন্তু মেক্সিকোর এই বিস্ময়ের কাছে অল্পের জন্য অধরাই রয়ে গেছে অস্কারের সোনালি মূর্তি। এমনকি প্রথম মেক্সিকান হিসেবে অস্কার জয়ের ইতিহাসও রচিত হয়ে গেছে গেল বছর। ইতিহাসটা গড়েছেন ইনারিতুরই বন্ধু আলফনজো কিউরন। গ্র্যাভিটির সুবাদে সেরা পরিচালকের অস্কার হাতে উঠেছে কিউরনের। এবারে হলিউড মুলুকে বার্ডম্যান-এর বিপুল বিজয় ইনারিতুর পুরোনো পাওনা ছিল। কিন্তু কী আছে বার্ডম্যান-এর এই একচ্ছত্র বিজয়ের মূলে?
বার্ডম্যানের ভূত
কোনো এক অজানা অমঙ্গল আশঙ্কায় চারপাশ থমথমে। মেঘলা আকাশ। পৃথিবীর বুকে নেমে আসছে এক আশ্চর্য উল্কা। এই বিচিত্র স্বপ্নদৃশ্য দিয়ে ছবির শুরু। ঝট করে স্বপ্নের ঘোর কেটে গেলে আমরা এককালের সুপারহিরো রেগান থমসনকে (মাইকেল কিটন) দেখি তার ড্রেসিংরুমে। ধ্যানরত এবং শূন্যে ভাসমান। ঝিমিয়ে পড়া ক্যারিয়ার চাঙা করতে মরিয়া রেগান। ব্রডওয়ের মঞ্চে সে ফিরে এসেছে আরও একবার ঝড় তুলতে। রেগান সবাইকে দেখিয়ে দিতে চায়, সে কতটা পারে। মাইক নামের বেয়াড়া সহ-অভিনেতাকে একটা শিক্ষা দিতে চায় রেগান। সমুচিত জবাব দেওয়া দরকার পত্রিকার সেই সমালোচনা লেখককেও, যে তার মুখের ওপর বলেছে ‘তুমি অভিনেতা নও, শুধুই একটা তারকা!’ ভেতর থেকে তাড়না দিতে থাকে তারই অভিনীত সুপারহিরো চরিত্র বার্ডম্যান। বার্ডম্যানরূপী এই অহং রেগানকে তাড়া করে ছবির একদম শেষ অবধি।
দুর্দান্ত অ্যাকশন দৃশ্য নয়। মনের ভেতরকার রাগ আর তীব্র অহমিকার কথা বলে বার্ডম্যান। ইনারিতুর অন্য সব আলোচিত ছবির মতো কাহিনির ঘনঘটা আর পটভূমির বিশালত্ব নয়, বার্ডম্যান বরং ভিন্ন ধারার এক উত্তেজনার জন্ম দেয়। ইনারিতুর অন্য সব ‘মাস্টার পিস’-এর মতো বার্ডম্যানও ‘আনপ্রেডিক্টেবল’, যেখানে অনুমান করা কঠিন, ছবির পরের দৃশ্যে ঠিক কী ঘটতে যাচ্ছে। খ্যাতির তলানিতে ঠেকে যাওয়া এক অভিনেতার ভেতরকার অহংবোধের খেলা আসলে পুরো সিনেমা-দুনিয়ার পর্দার পেছনের এক অধ্যায়। বড় তারকাদের নিয়ে হরদম ছবি হয়। কিন্তু একজন ঝিমিয়ে পড়া তারকার মানসিক জটিলতার গভীরে এমন অনায়াসে ডুব দিতে পারেন সম্ভবত একজনই। তিনি আলেহান্দ্রো গনজালেস ইনারিতু।
এ সপ্তাহের ৮৭তম অস্কার আসরে সেরা ছবি, সেরা চিত্রনাট্য আর সেরা নির্মাতার বাইরে বার্ডম্যান আরও একটি বিভাগে সেরার পুরস্কার জিতেছে; সেটি সিনেমাটোগ্রাফি। ছবিতে অবিশ্বাস্য দীর্ঘ সব লং টেক চোখে পড়ার মতো। শটের মাঝখানে ‘কাট’ বলতে গেলে নেই। ক্যামেরা যেন এক যান্ত্রিক অক্টোপাস। ঘুরে, প্যাঁচ খেয়ে, কখনো হাওয়ায় ভেসে সেটি বারবার পিছু ধাওয়া করেছে চরিত্রের।
বার্ডম্যান আমাদের চেনা সুপারহিরো-টাইপ ছবি নয়। এর সঙ্গে ব্যাটম্যান কিংবা সুপারম্যান ঘরানার মারদাঙ্গা সুপারহিরো ছবির মিল নেই। বার্ডম্যান সুপারহিরোর ছবি নয়, বরং সুপারহিরোকে নিয়ে ছবি। দ্য টেলিগ্রাফ যাকে বলেছে ‘ডার্ক নাইট অব দ্য সোল’ বা ‘আত্মার ডার্ক নাইট’।