বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় অভিনেত্রী
কবরী। মঞ্চে আবির্ভাব মাত্র ১৩ বছর বয়সে নৃত্যশিল্পী হিসেবে। ১৯৬৪ সালে
সুভাষ দত্তের ‘সুতরাং’ ছবিতে অভিনয়ের সুবাদে বড়পর্দায় যাত্রা শুরু। এ
ছবির সাফল্যের পর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। একের পর এক ছবিতে
অসাধারণ অভিনয় করে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন কবরী। দর্শকের ভালোবাসায় খেতাব পান
‘মিষ্টি মেয়ে’। সব ধরনের ছবিতেই অভিনয় করেছেন তিনি। ক্যারিয়ারের বেশির
ভাগ সাড়াজাগানো রোমান্টিক ছবিতে তাঁর নায়ক হয়েছেন রাজ্জাক। চলচ্চিত্রে
৫০ বছর পেরোনো এই অভিনয়শিল্পীকে ২০১৩ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে
আজীবন সম্মাননা দেওয়া হচ্ছে। আগামী ৩ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ
পুরস্কার তুলে দেবেন। এর আগে প্রথম আলোর সঙ্গে আজীবন সম্মাননা পাওয়াসহ
বিভিন্ন প্রসঙ্গে কথা বলেছেন কবরী।
জীবনে তো অনেক পুরস্কারই পেয়েছেন। অভিনেত্রী হিসেবেও একাধিকবার পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। এবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের আসরে পাচ্ছেন আজীবন সম্মাননা। এ অর্জনকে কীভাবে দেখছেন?
আমার কাজের জন্য যে স্বীকৃতি পাচ্ছি তা অবশ্যই ইতিবাচকভাবে দেখছি। চলচ্চিত্রে কাজের জন্য আজীবন সম্মাননা পুরস্কারের মূল্যায়ন করায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ। আসলে নানা সমস্যার মধ্যেও যে আমরা নিরলসভাবে কাজ করি তার স্বীকৃতিকে আমি যতটা না পুরস্কার হিসেবে দেখি তার চেয়ে বেশি দেখি মানুষের ভালোবাসা হিসেবে। আমার মনে হয় আমি বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে কাজ করেছি, সেটাকে সবাই ইতিবাচকভাবে দেখেছেন। তাঁরা যে ভাবেন কবরী আপা আমাদের মানুষ, আমাদেরই একজন, আমার এই পুরস্কারপ্রাপ্তিও মনে হয় তারই ফল।
রুপালি পর্দায় আপনি দর্শকদের নয়নমণি। অভিনয়জীবন পেরিয়ে বাস্তবজীবনেও আপনি মানুষের সঙ্গে সরাসরি কাজ করেছেন সংসদ সদস্য হিসেবে। চলচ্চিত্র অঙ্গন আর রাজনীতির মাঠ—এই দুই জগতের মিল-অমিল কী?
মিল-অমিল বলতে আমি এটাই বুঝি যে রাজনীতি, চলচ্চিত্র, সংস্কৃতি, অর্থনীতি সবই জীবনের অংশ। বিভিন্ন ক্ষেত্রে, বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্নভাবে এসবের মূল্যায়ন হয়। কোনোটাকে বাদ দিয়ে কিন্তু কোনোটা না। চলচ্চিত্রে শিল্পীদের যে অবদান তার মধ্য দিয়ে মানুষের মন-মগজের একটা বিকাশ ঘটে। সুতরাং দুটিকে কোনোভাবে আলাদা করে দেখি না। আমরা নানা ক্ষেত্রে কাজ করতে পারি কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমাদের কিন্তু এক সমাজেই থাকতে হয়।
আমি একটা পেশা থেকে এসেছি এবং সেই পেশায় প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়েই এসব অর্জন করেছি। আমি রাজনীতিতেও এসেছি। মানুষের মধ্যে কম্পিটিশন করতে হয়েছে। তার মধ্য থেকে আমার কাজের মূল্যায়ন হয়েছে, এটা কিন্তু আরও কঠিন বিষয়। আমরা যে জায়গা থেকে এসেছি, সেখানকার দর্শক শুধু দেখতে চায় কবরী শুধুই আমার। যখন কোনো দর্শক চলচ্চিত্র দেখেন, তখন তাঁর ভালোবাসার বন্ধন এতটাই দৃঢ় থাকে যে ভালোবাসার জায়গায় কোনো ছাড় দিতে চান না। কিন্তু রাজনীতিটা হলো সম্পূর্ণ ভিন্ন। কবরীর অন্য রকম মূল্যায়ন হবে। রাজনীতিতে কবরী একজনের জন্য না, সে সবার জন্য। মানে রাজনীতিতে আমার কাজটা এমনভাবে মূল্যায়ন হবে যে কবরী একজনের জন্য না, কবরী সবার জন্য। সবাইকে যেন সমানভাবে দেখা হয়।
চলচ্চিত্রে অভিনয় করে যশ-খ্যাতি, স্বীকৃতি-পুরস্কার থেকে শুরু করে এক জীবনে অনেক কিছুই পেয়েছেন। নায়িকা হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করে পরিচালক হিসেবেও কাজ করেছেন। জীবনের এই পর্যায়ে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের সমস্যা ও সম্ভাবনাময় দিক কী কী বলে মনে করেন আপনি?
সম্ভাবনা যেমন অনেক আছে, ঠিক তেমনি সমস্যাও আছে অনেক। সমস্যাগুলোর সমাধান যদি হয়, তাহলে অটোমেটিকেলি সম্ভাবনার দ্বার খুলে যাবে। আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা আমাদের দেশের রাজনীতি। রাজনীতি এখন এমন একটা জায়গায় পৌঁছে গেছে, সেখানে দেশের কেউ স্বস্তি কিংবা শান্তিতে নেই। শিল্পীদের গান শুনে, অভিনয় শিল্পীদের অভিনয় দেখে মানুষ যেমন তৃপ্ত হয় একজন রাজনীতিবিদের কথা আর কাজ নিয়ে কোনো মানুষ সন্তুষ্ট হয় না। একজন রাজনীতিবিদ সত্যিই মানুষের জন্য কাজ করলে মানুষ কেন তাঁদের নিয়ে সন্তুষ্ট হতে পারবে না—তা আমার বোধগম্য নয়।
আমার দেশের সম্ভাবনা হচ্ছে কবরী, ববিতা, শাবানা, কিংবা মৌসুমী, শাবনূর কিংবা আরও যাঁরা নতুন আসছেন তাঁরা। কিংবা যাঁরা গান গান তাঁরা। এসব সম্ভাবনা নিয়ে অপেক্ষা করে বসে আছি আমরা। এত দিন ধরে দেশে যে অরাজক পরিস্থিতি এত কিছুর পরও অনেকেই যে মুষড়ে পড়েননি এটাই তো সম্ভাবনা। শিল্প, সাহিত্য এবং সংস্কৃতিতে আমরা যেমন একটা চর্চার মধ্য দিয়ে যাই, তেমনটা কেন রাজনীতিতে হয় না! আমার কাছে মনে হয়, আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা আমাদের রাজনীতি।
নায়িকা কবরীর সাফল্যমণ্ডিত জীবনে এগিয়ে চলার অনুপ্রেরণা কী ছিল? পেশাজীবন ও ব্যক্তিজীবনে সাফল্যের নেপথ্যে কাদের ভূমিকা আপনাকে উৎসাহ জুগিয়েছে বলে মনে করেন?
এখানে অবশ্যই মিলিত সংগ্রামটাই কাজ করেছে বেশি। আমি যাঁদের সঙ্গে কাজ করেছি, এই যেমন আমার ছবির পরিচালক, সহকর্মী অভিনয়শিল্পী, পরিবার, দর্শক-শ্রোতা। এটা সবচেয়ে বড় করে বলতে চাই, দর্শকদের ভালোবাসা আর উৎসাহ যদি না পেতাম, তাহলে হয়তো কোনো দিন কবরী হতে পারতাম না। এটাই সবচেয়ে বড় সত্যি কথা। আমি যে কষ্ট করেছি, শিখতে চেয়েছি আমার আশপাশে যারা আমার কারণে কষ্ট স্বীকার করেছেন, তাঁরাও বড় অনুপ্রেরণা। সাফল্যের ক্ষেত্রে আমার না যত অবদান, তার চেয়ে বেশি অবদান আমাকে যাঁরা কবরী বানিয়েছেন বা কবরী হতে সাহায্য করেছেন তাঁরাই। মিডিয়ার ভূমিকাও ছিল অপরিসীম। তাঁরা আমাকে সব সময় নানাভাবে সহযোগিতা করে আসছে। আমি যে শুধু পরীক্ষা দিয়ে দিয়ে পাস করে পার হয়ে গেছি তা কিন্তু না, আমাকে পরীক্ষার উপযোগী করে তৈরির জন্য যাদের অক্লান্ত পরিশ্রম ছিল তাঁরাও আমার অনুপ্রেরণা। আমার চলচ্চিত্র সমালোচকেরাও এ ক্ষেত্রে সাহায্য করেছেন। এক কথায় বলতে গেলে, আমার সাফল্যের পেছনে বিশেষ কোনো একজন মানুষের ভূমিকা ছিল না।
পাঁচ দশকের অভিনয়জীবনে সেরা ছবি, সেরা চরিত্র এবং সেরা পরিচালকদের কথা বলুন...
‘সুতরাং’ এবং ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ ছবি দুটি সেরা ছবির অন্যতম। ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী একটি ছবি ছিল। ঋত্বিক ঘটকের কাজের ধরনটাই ছিল একেবারে আলাদা। তাঁর গল্প বলায়, সিনেমা নির্মাণের নানাবিধ কৌশলে তিনি এই ছবিতে নতুন এক মাত্রা যোগ করেছেন। এটাকে একটা বিশেষ ছবি মনে করি। আমার মনে হয়েছে ঋত্বিক ঘটক একটা বিশাল মহীরুহের মতো। একটা গাছের মতো ছিলেন দত্ত দা (সুভাষ দত্ত)।
‘সুতরাং’ ছবিটিও মানুষের মনে ভীষণভাবে দাগ কেটে গিয়েছিল। এখান থেকেই আমার উৎপত্তি এবং আমি বিকশিত হয়েছি ঋত্বিক ঘটকের মতো পরিচালকের হাত দিয়ে। ‘সুতরাং’ ছবিতে যখন অভিনয় করি, তখন আমি একটি চারাগাছ। এরপর আমি যখন বিকশিত হলাম, তখন পেলাম মুক্তিযুদ্ধ এবং এরপর ‘তিতাস একটি নদীর নাম’-এর মতো সিনেমা। ঋত্বিক ঘটকের ছবির প্রতিটি ফ্রেম কথা বলে। কবরীর নায়িকা হিসেবে যে জীবনটা তা যদি একটি ক্যানভাস হয়ে থাকে ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ আমার কাছে তাই।
বাংলাদেশের জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। বাংলাদেশের জন্ম দেখেছেন। বহু সমস্যায় জর্জরিত হলেও নানা চড়াই-উতরাই পাড়ি দেওয়া বাংলাদেশের অর্জনও কম নয়। এখনো একদিকে দেশে চলছে লাগাতার রাজনৈতিক সহিংসতা, অন্যদিকে বাংলাদেশের দামাল ছেলেরা ক্রিকেটে বিশ্বজয়ের পথে এগিয়ে চলেছে। বাংলাদেশ নিয়ে আপনার স্বপ্নের কথা জানতে চাই।
আমাদের সম্ভাবনার যে দিকগুলো আছে তার মধ্যে সবচেয়ে বড় সম্ভাবনার নাম এখন ক্রিকেট। কবরী যেমন গ্রাম থেকে এসে, একটি বুভুক্ষু অঞ্চল থেকে এসে চলচ্চিত্রে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে, ঠিক তেমনি আমাদের সাকিব, মাহমুদউল্লাহ, মাশরাফি—এরা সবাই গ্রাম থেকে এসে একটা সময় বিকেএসপিতে ভর্তি হয়। তারপর দেশের হয়ে বিশ্ব ক্রিকেটে নিজেদের অবস্থার কথা জানান দিতে পেরেছে। আমরা সংগ্রামী মানুষগুলো যে একটা জায়গা দখল করেছি এটা বিরাট সম্ভাবনা। বাংলাদেশের এসব প্রতিভাবান খেলোয়াড়কে দেখে ভবিষ্যতে আরও সাকিব, মাশরাফি, মাহমুদউল্লাহ, মুশফিক এই জায়গাতে আসবে। দেশের মুখ উজ্জ্বল করবে। এ প্রজন্মই একদিন দেশের সব অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলবে।
জীবনে তো অনেক পুরস্কারই পেয়েছেন। অভিনেত্রী হিসেবেও একাধিকবার পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। এবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের আসরে পাচ্ছেন আজীবন সম্মাননা। এ অর্জনকে কীভাবে দেখছেন?
আমার কাজের জন্য যে স্বীকৃতি পাচ্ছি তা অবশ্যই ইতিবাচকভাবে দেখছি। চলচ্চিত্রে কাজের জন্য আজীবন সম্মাননা পুরস্কারের মূল্যায়ন করায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ। আসলে নানা সমস্যার মধ্যেও যে আমরা নিরলসভাবে কাজ করি তার স্বীকৃতিকে আমি যতটা না পুরস্কার হিসেবে দেখি তার চেয়ে বেশি দেখি মানুষের ভালোবাসা হিসেবে। আমার মনে হয় আমি বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে কাজ করেছি, সেটাকে সবাই ইতিবাচকভাবে দেখেছেন। তাঁরা যে ভাবেন কবরী আপা আমাদের মানুষ, আমাদেরই একজন, আমার এই পুরস্কারপ্রাপ্তিও মনে হয় তারই ফল।
রুপালি পর্দায় আপনি দর্শকদের নয়নমণি। অভিনয়জীবন পেরিয়ে বাস্তবজীবনেও আপনি মানুষের সঙ্গে সরাসরি কাজ করেছেন সংসদ সদস্য হিসেবে। চলচ্চিত্র অঙ্গন আর রাজনীতির মাঠ—এই দুই জগতের মিল-অমিল কী?
মিল-অমিল বলতে আমি এটাই বুঝি যে রাজনীতি, চলচ্চিত্র, সংস্কৃতি, অর্থনীতি সবই জীবনের অংশ। বিভিন্ন ক্ষেত্রে, বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্নভাবে এসবের মূল্যায়ন হয়। কোনোটাকে বাদ দিয়ে কিন্তু কোনোটা না। চলচ্চিত্রে শিল্পীদের যে অবদান তার মধ্য দিয়ে মানুষের মন-মগজের একটা বিকাশ ঘটে। সুতরাং দুটিকে কোনোভাবে আলাদা করে দেখি না। আমরা নানা ক্ষেত্রে কাজ করতে পারি কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমাদের কিন্তু এক সমাজেই থাকতে হয়।
আমি একটা পেশা থেকে এসেছি এবং সেই পেশায় প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়েই এসব অর্জন করেছি। আমি রাজনীতিতেও এসেছি। মানুষের মধ্যে কম্পিটিশন করতে হয়েছে। তার মধ্য থেকে আমার কাজের মূল্যায়ন হয়েছে, এটা কিন্তু আরও কঠিন বিষয়। আমরা যে জায়গা থেকে এসেছি, সেখানকার দর্শক শুধু দেখতে চায় কবরী শুধুই আমার। যখন কোনো দর্শক চলচ্চিত্র দেখেন, তখন তাঁর ভালোবাসার বন্ধন এতটাই দৃঢ় থাকে যে ভালোবাসার জায়গায় কোনো ছাড় দিতে চান না। কিন্তু রাজনীতিটা হলো সম্পূর্ণ ভিন্ন। কবরীর অন্য রকম মূল্যায়ন হবে। রাজনীতিতে কবরী একজনের জন্য না, সে সবার জন্য। মানে রাজনীতিতে আমার কাজটা এমনভাবে মূল্যায়ন হবে যে কবরী একজনের জন্য না, কবরী সবার জন্য। সবাইকে যেন সমানভাবে দেখা হয়।
চলচ্চিত্রে অভিনয় করে যশ-খ্যাতি, স্বীকৃতি-পুরস্কার থেকে শুরু করে এক জীবনে অনেক কিছুই পেয়েছেন। নায়িকা হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করে পরিচালক হিসেবেও কাজ করেছেন। জীবনের এই পর্যায়ে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের সমস্যা ও সম্ভাবনাময় দিক কী কী বলে মনে করেন আপনি?
সম্ভাবনা যেমন অনেক আছে, ঠিক তেমনি সমস্যাও আছে অনেক। সমস্যাগুলোর সমাধান যদি হয়, তাহলে অটোমেটিকেলি সম্ভাবনার দ্বার খুলে যাবে। আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা আমাদের দেশের রাজনীতি। রাজনীতি এখন এমন একটা জায়গায় পৌঁছে গেছে, সেখানে দেশের কেউ স্বস্তি কিংবা শান্তিতে নেই। শিল্পীদের গান শুনে, অভিনয় শিল্পীদের অভিনয় দেখে মানুষ যেমন তৃপ্ত হয় একজন রাজনীতিবিদের কথা আর কাজ নিয়ে কোনো মানুষ সন্তুষ্ট হয় না। একজন রাজনীতিবিদ সত্যিই মানুষের জন্য কাজ করলে মানুষ কেন তাঁদের নিয়ে সন্তুষ্ট হতে পারবে না—তা আমার বোধগম্য নয়।
আমার দেশের সম্ভাবনা হচ্ছে কবরী, ববিতা, শাবানা, কিংবা মৌসুমী, শাবনূর কিংবা আরও যাঁরা নতুন আসছেন তাঁরা। কিংবা যাঁরা গান গান তাঁরা। এসব সম্ভাবনা নিয়ে অপেক্ষা করে বসে আছি আমরা। এত দিন ধরে দেশে যে অরাজক পরিস্থিতি এত কিছুর পরও অনেকেই যে মুষড়ে পড়েননি এটাই তো সম্ভাবনা। শিল্প, সাহিত্য এবং সংস্কৃতিতে আমরা যেমন একটা চর্চার মধ্য দিয়ে যাই, তেমনটা কেন রাজনীতিতে হয় না! আমার কাছে মনে হয়, আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা আমাদের রাজনীতি।
নায়িকা কবরীর সাফল্যমণ্ডিত জীবনে এগিয়ে চলার অনুপ্রেরণা কী ছিল? পেশাজীবন ও ব্যক্তিজীবনে সাফল্যের নেপথ্যে কাদের ভূমিকা আপনাকে উৎসাহ জুগিয়েছে বলে মনে করেন?
এখানে অবশ্যই মিলিত সংগ্রামটাই কাজ করেছে বেশি। আমি যাঁদের সঙ্গে কাজ করেছি, এই যেমন আমার ছবির পরিচালক, সহকর্মী অভিনয়শিল্পী, পরিবার, দর্শক-শ্রোতা। এটা সবচেয়ে বড় করে বলতে চাই, দর্শকদের ভালোবাসা আর উৎসাহ যদি না পেতাম, তাহলে হয়তো কোনো দিন কবরী হতে পারতাম না। এটাই সবচেয়ে বড় সত্যি কথা। আমি যে কষ্ট করেছি, শিখতে চেয়েছি আমার আশপাশে যারা আমার কারণে কষ্ট স্বীকার করেছেন, তাঁরাও বড় অনুপ্রেরণা। সাফল্যের ক্ষেত্রে আমার না যত অবদান, তার চেয়ে বেশি অবদান আমাকে যাঁরা কবরী বানিয়েছেন বা কবরী হতে সাহায্য করেছেন তাঁরাই। মিডিয়ার ভূমিকাও ছিল অপরিসীম। তাঁরা আমাকে সব সময় নানাভাবে সহযোগিতা করে আসছে। আমি যে শুধু পরীক্ষা দিয়ে দিয়ে পাস করে পার হয়ে গেছি তা কিন্তু না, আমাকে পরীক্ষার উপযোগী করে তৈরির জন্য যাদের অক্লান্ত পরিশ্রম ছিল তাঁরাও আমার অনুপ্রেরণা। আমার চলচ্চিত্র সমালোচকেরাও এ ক্ষেত্রে সাহায্য করেছেন। এক কথায় বলতে গেলে, আমার সাফল্যের পেছনে বিশেষ কোনো একজন মানুষের ভূমিকা ছিল না।
পাঁচ দশকের অভিনয়জীবনে সেরা ছবি, সেরা চরিত্র এবং সেরা পরিচালকদের কথা বলুন...
‘সুতরাং’ এবং ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ ছবি দুটি সেরা ছবির অন্যতম। ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী একটি ছবি ছিল। ঋত্বিক ঘটকের কাজের ধরনটাই ছিল একেবারে আলাদা। তাঁর গল্প বলায়, সিনেমা নির্মাণের নানাবিধ কৌশলে তিনি এই ছবিতে নতুন এক মাত্রা যোগ করেছেন। এটাকে একটা বিশেষ ছবি মনে করি। আমার মনে হয়েছে ঋত্বিক ঘটক একটা বিশাল মহীরুহের মতো। একটা গাছের মতো ছিলেন দত্ত দা (সুভাষ দত্ত)।
‘সুতরাং’ ছবিটিও মানুষের মনে ভীষণভাবে দাগ কেটে গিয়েছিল। এখান থেকেই আমার উৎপত্তি এবং আমি বিকশিত হয়েছি ঋত্বিক ঘটকের মতো পরিচালকের হাত দিয়ে। ‘সুতরাং’ ছবিতে যখন অভিনয় করি, তখন আমি একটি চারাগাছ। এরপর আমি যখন বিকশিত হলাম, তখন পেলাম মুক্তিযুদ্ধ এবং এরপর ‘তিতাস একটি নদীর নাম’-এর মতো সিনেমা। ঋত্বিক ঘটকের ছবির প্রতিটি ফ্রেম কথা বলে। কবরীর নায়িকা হিসেবে যে জীবনটা তা যদি একটি ক্যানভাস হয়ে থাকে ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ আমার কাছে তাই।
বাংলাদেশের জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। বাংলাদেশের জন্ম দেখেছেন। বহু সমস্যায় জর্জরিত হলেও নানা চড়াই-উতরাই পাড়ি দেওয়া বাংলাদেশের অর্জনও কম নয়। এখনো একদিকে দেশে চলছে লাগাতার রাজনৈতিক সহিংসতা, অন্যদিকে বাংলাদেশের দামাল ছেলেরা ক্রিকেটে বিশ্বজয়ের পথে এগিয়ে চলেছে। বাংলাদেশ নিয়ে আপনার স্বপ্নের কথা জানতে চাই।
আমাদের সম্ভাবনার যে দিকগুলো আছে তার মধ্যে সবচেয়ে বড় সম্ভাবনার নাম এখন ক্রিকেট। কবরী যেমন গ্রাম থেকে এসে, একটি বুভুক্ষু অঞ্চল থেকে এসে চলচ্চিত্রে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে, ঠিক তেমনি আমাদের সাকিব, মাহমুদউল্লাহ, মাশরাফি—এরা সবাই গ্রাম থেকে এসে একটা সময় বিকেএসপিতে ভর্তি হয়। তারপর দেশের হয়ে বিশ্ব ক্রিকেটে নিজেদের অবস্থার কথা জানান দিতে পেরেছে। আমরা সংগ্রামী মানুষগুলো যে একটা জায়গা দখল করেছি এটা বিরাট সম্ভাবনা। বাংলাদেশের এসব প্রতিভাবান খেলোয়াড়কে দেখে ভবিষ্যতে আরও সাকিব, মাশরাফি, মাহমুদউল্লাহ, মুশফিক এই জায়গাতে আসবে। দেশের মুখ উজ্জ্বল করবে। এ প্রজন্মই একদিন দেশের সব অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলবে।