প্রকৌশলী ও লেখক-ব্লগার অভিজিৎ
রায়ের হত্যাকাণ্ডে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) এক শিক্ষক
এবং শিবিরের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে সন্দেহ করছেন অভিজিতের বাবা অধ্যাপক অজয়
রায়।
শুক্রবার
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর সি মজুমদার মিলনায়তনে নাগরিক কমিটির উদ্যোগে
অনুষ্ঠিত এক নাগরিক সমাবেশে বক্তব্যকালে তিনি এ সন্দেহ প্রকাশ করেন।
একইসাথে হত্যাকান্ডের ঘটনায় ‘অগ্রগতি নেই’ বলে হতাশাও প্রকাশ করেছেন।
অজয়
রায় বলেন, বুয়েটের ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক ফারসীম
মান্নানের গতিবিধি ও তার চরিত্র আমার কাছে প্রশ্নবিদ্ধ বলে মনে হচ্ছে। তিনি
ফেসবুকের মাধ্যমে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আলোচনার ব্যবস্থা করেন। এতে ১১ জন
অতিথির মধ্যে আমন্ত্রণ করা হয়নি এমন চার-পাঁচজনের উপস্থিতি ছিল। বুয়েটের
ওই শিক্ষকই তাদেরকে ডেকে আলোচনা স্থলে এনেছে বলে তারা স্বীকার করেছে।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শুদ্ধস্বরের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে সাড়ে ছয়টা থেকে সাতটা
পর্যন্ত অবস্থান করে অভিজিৎ ও তার স্ত্রী বন্যা। সবশেষে অভিজিৎ
বক্তব্য দিয়ে ছায়াবীথি ও অবসর প্রকাশনীর মাঝখানে ত্রিপল বিছানো উন্মুক্ত
স্থানে বসেন তারা। অভিজিৎকে ঐ আলোচনা সভা থেকেই লক্ষ্য করা হচ্ছিল।
অভিজিৎ
হত্যার পর তিনি বলেন, ফেসবুকের মাধ্যমে ফারসীম মান্নান আলোচনার আয়োজন করে।
জিরো টু ইনফিনিটি ও পাই নামে সংগঠনের লোকজন উপস্থিত ছিল সেখানে। যাদের
সঙ্গে শিবিরের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে অভিযোগ আছে। সংগঠন দুটির সম্পাদক
শিবিরের আব্দুল্লাহ আল মামুন অনাহূত ব্যক্তিদের গালাগাল করেন। তারা
অভিজিতকে দেখে ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়।
অজয়
রায় বলেন, সিআইডি, গোয়েন্দা বিভাগ ও ডিবিকে সবার নামসহ সার্বিক বিষয়টি
জানানো হয়েছে। এরপর অনেকদিন, প্রায় এক মাসের মতো সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু
দৃশ্যত কোন অগ্রগতি নেই। তদন্তে অগ্রগতি হয়েছে বলে মনে হচ্ছে না। উন্নত
প্রযুক্তির মাধ্যমে এফবিআই এ হত্যায় জড়িতদের বের করতে পারবে বলে আশা করি।
সেই সঙ্গে তাদের মদদদাতা মৌলবাদী গোষ্ঠীর মুখোশও উন্মোচিত হবে।
আবেগাপ্লুত
কণ্ঠে তিনি বলেন, পিতার আগে পুত্রের মৃত্যু ঘটেছে। তার লাশ বহন করা আমার
কাছে অত্যন্ত কঠিন। অভিজিতের অনেক কিছু দেয়ার ছিল, মৌলবাদী শক্তি তাকে
বাঁচতে দিল না। তাকে হত্যা করা হলেও তার চিন্তা ও দর্শনকে হত্যা করা যাবে
না।
সাবেক
ডেপুটি স্পিকার কর্ণেল শওকত আলী বলেন, অভিজিতকে হত্যার মাধ্যমে মুক্তমনা
লেখনীর প্রতি হুমকি তৈরির চেষ্টা করেছে প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী। স্বাধীন
চিন্তা প্রকাশের পথকে বাধামুক্ত করতে এ হত্যার দ্রুত বিচার সম্পন্ন করতে
হবে।
ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, উগ্র ধর্মীয়
সন্ত্রাস পৃথিবীব্যাপী একই রূপ। তারা নানা নামে আমাদের দেশসহ সারা পৃথিবীতে
আধুনিকতকা, প্রগতিশীলতা ও সভ্যতা বিরোধী সংঘর্ষে লিপ্ত। তারা আধুনিক
প্রযুক্তির অপব্যবহার করে তার মাধ্যমে সন্ত্রাসকে বিশ্বব্যাপী সম্প্রসারিত
করছে। অভিজিৎ হত্যাকাণ্ড তাই প্রগতিশীলতা, আধুনিকতা, সমস্ত মুক্তবুদ্ধি এবং
মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে হত্যাকান্ড। যে কারণে এর বিরুদ্ধে আমাদের
ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ অব্যাহত রাখতে হবে। এটি আমাদের অস্তিত্বের সংগ্রাম।
ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরেটাস অধ্যাপক অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি ফরিদউদ্দিন আহমেদ, আওয়ামী
লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নূহ উল আলম লেনিন।
সভার
শুরুতে নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে প্রতিবাদপত্র পাঠ করেন জিয়াউদ্দিন তারেক
আলী। অভিজিতের জীবনী পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা
বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ
ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খন্দকার ইব্রাহীম খালেদ, মুজাহিদুল ইসলাম
সেলিম, ডা. সারোয়ার আলী, পঙ্কজ ভট্টাচার্য।
উল্লেখ্য,
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি একুশের বই মেলা থেকে স্ত্রীসগ বাসায় ফেরার পথে অভিজিত্
রায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টিএসসির কাছে সোহরায়াওয়ার্দী উদ্যানের ফটকের সামনে
দুষ্কৃতিকারীর হামলায় নিহত হন।