Media news - স্লামডগ থেকে বিজ্ঞানী


‘ও আচ্ছা...আরও একজন বলিউড অভিনেতার তাহলে হলিউড অভিষেক হলো’
স্লামডগ মিলিয়নিয়ার ছবিতে দেব প্যাটেলকে দেখে অধিকাংশ হলিউডি দর্শক এমনটাই ভেবেছিলেন। দেখতে ভারতীয়, ইংরেজি বাচনভঙ্গিটাও ভারতীয় ঢঙের। ধারণাটা তাই অমূলক ছিল না। স্লামডগ মিলিয়নিয়ার ছবির অভাবনীয় সাফল্যের পর দেব প্যাটেল যখন কয়েকটি হলিউডি চলচ্চিত্রে অভিনয় করে ফেললেন, নিয়মিত হাজিরা দিতে শুরু করলেন এইচবিওর ‘দ্য নিউজরুম’ অনুষ্ঠানে, তখনই আগ্রহী দর্শকের টনক নড়ল। আরে, ছেলেটা যে ‘ব্রিটিশ’!
বাবা-মা ভারতীয়, সেই সুবাদে এই উপমহাদেশের সঙ্গে একটা টান আছে। তবে দেব প্যাটেলের জন্ম-ছেলেবেলা-বেড়ে ওঠা পুরোটাই যুক্তরাজ্যে। অভিনয়ের ওপর জিসিএসই ডিগ্রি নিয়েছেন যুক্তরাজ্যের হুইটমোর হাইস্কুল থেকে। বড় পর্দায় তাঁর পদচারণ মোটামুটি নিয়মিত হয়ে উঠেছে। তবু শুধু ভারতীয় চরিত্রের প্রয়োজন হলেই যেন হলিউডে তাঁর ডাক পড়ে। এ নিয়ে একটা চাপা ব্যথাবোধ যে কাজ করে, সেটি দেব অস্বীকার করেননি।
৬ মার্চ মুক্তি পাওয়া সাই-ফাই ঘরানার চলচ্চিত্র চ্যাপি দিয়ে সেই দুঃখ কি কিছুটা ঘুচল? ছবিতে ডেওন উইলসনের চরিত্রে দেব প্যাটেল অক্সফোর্ড পেরোনো একজন তরুণ বিজ্ঞানী। তাঁর উদ্ভাবিত একঝাঁক অত্যাধুনিক রোবট দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে অপরাধ নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব পালন করে। পুলিশ বাহিনী এখানে রীতিমতো বেকার। পুরো শহরে যখন তাঁর উদ্ভাবনের জয়জয়কার, এসব নিয়ে মেধাবী তরুণটির মাতামাতি নেই একদম। তাঁর একটাই ধ্যান, কেমন করে অনুভূতিসম্পন্ন রোবট তৈরি করা যায়। একসময় ডেওনের গবেষণা সফল হয়। তৈরি হয় চ্যাপি। ‘তৈরি হয়’ না বলে ‘জন্ম নেয়’ও বলা যায়। চ্যাপি এক ‘শিশু রোবট’। মানবশিশুর মতোই যাকে শিখিয়ে-পড়িয়ে বড় করতে হয়।
খ্যাপাটে বিজ্ঞানী হিসেবে দেবকে কেমন মানাল, সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে ঢাকার স্টার সিনেপ্লেক্সে ঢুঁ মারতে পারেন। যুক্তরাজ্যের সঙ্গে একই সময়ে ছবিটি মুক্তি পেয়েছে বাংলাদেশ আর ভারতেও। এ নিয়ে দেব প্যাটেলের মনে অবশ্য খানিকটা খুঁতখুঁতানি আছে। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘সাই-ফাই ছবি হলেও এর মধ্যে বলিউডি ঘরানার আবেগীয় ব্যাপার-স্যাপার আছে। একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে আমাকে নেওয়ার কারণ সম্ভবত এটাই। পরিচালক নেইল ব্লমক্যাম্প ভারতীয় দর্শকদের মধ্যেও সাড়া ফেলতে চেয়েছেন।’
চ্যাপি ছবিতে দেব প্যাটেল ও হিউ জ্যাকম্যানছবিতে বিজ্ঞানীর চরিত্রে অভিনয় করলেও বাস্তবে দেবের নাকি খানিকটা ‘টেকনোফোবিয়া’ (প্রযুক্তিভীতি) আছে। রোবট-টোবট নিয়ে অত জটিল ভাবনা তাঁর মাথায় খেলে না। আর দশজন সাধারণ মানুষের মতো তিনিও ভাবেন, ‘শোবার ঘর গুছিয়ে দেবে, কাপড় আর থালাবাসন ধুয়ে দেবে; এমন একটা রোবট পেলে মন্দ হতো না।’ তবে চ্যাপির উদ্ভাবক চরিত্রে দেব তাঁর সেরাটুকুই ঢেলে দিয়েছেন। তাঁর চরিত্র এতটাই উজ্জ্বল, সেখানে হিউ জ্যাকম্যানও অনেকটাই ম্লান। ‘উলভারিন’খ্যাত তারকার চরিত্রটা এই ছবিতে খানিকটা বেখাপ্পাই মনে হলো। কেন? যাঁরা ছবিটা দেখেননি, তাঁদের জন্য চমকটা জমা থাক।
প্রায় আট বছরের ক্যারিয়ারে গুজব-গুঞ্জনও দেব প্যাটেলের পিছু ছাড়েনি। একসময় স্লামডগ মিলিয়নিয়ার ছবির সহশিল্পী ফ্রিদা পিন্টো ছিলেন দেবের ‘দেবী’! ছয় বছরের দীর্ঘ সম্পর্ক। ২০১৪ সালের টানাপোড়েন শেষে সম্পর্কটা আছে ‘আমরা এখন ভালো বন্ধু’ পর্যায়ে। প্রেম-ট্রেমের চেয়ে ক্যারিয়ারের দিকেই এখন দেব প্যাটেলের পূর্ণ মনোযোগ। এ বছরই দ্য ম্যান হু নিউ ইনফিনিটি ছবিতে আসছেন একজন বিখ্যাত গণিতবিদ চরিত্রে। গল্প আর চরিত্র বাছাইয়ের ক্ষেত্রে খুবই খুঁতখুঁতে দেব। জেনে অবাক হবেন, দেখতে ‘সুবোধ-ভদ্র ছেলে’ নায়কটির মার্শাল আর্টে ব্ল্যাক বেল্ট আছে, জিতেছেন যুক্তরাজ্যে জাতীয় পর্যায়ের একাধিক পুরস্কারও। ভবিষ্যতে ধুন্ধুমার মারকুটে চরিত্রে তাঁকে দেখা যেতেই পারে!
-

Latest

Popular Posts

Popular Posts

Popular Posts