প্রতি বছর মার্চ
মাসের প্রথমেই চা বাগানগুলোতে ‘চা চয়ন’-এর (তোলা) রেওয়াজ। এসময় বাগানগুলোতে অসংখ্য নারী-পুরুষ শ্রমিক অধিক উত্পাদনের আশায় প্রথা অনুযায়ী পূজা-পার্বণের মধ্য দিয়ে শুরু
করে চা-চয়ন। সবুজে ঢাকা উঁচু টিলার
ঢালুতে সারি সারি
চা বাগানে দু’ আঙ্গুলের সাহয্যে শ্রমিকদের উত্সব মুখর পরিবেশে চায়ের কুঁড়ি তোলার দৃশ্য যে
কাউকে আনন্দ দেয়। কিন্তু এবার চায়ের
জন্য বৈরী
আবহাওয়ার দরুণ সিলেটে চায়ের উত্পাদন লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে শংকিত বাগান সংশ্লিষ্টরা।
বাগানগুলোতেও ‘চা চয়ন’-এ নামতে একটু দেরি হচ্ছে। তারা এখন একটা ভালো বৃষ্টির প্রত্যাশায়। তবে গত সোমবার সিলেটের ৪টি ও মৌলভীবাজারে ৪টিসহ মাত্র ৮টি বাগানে চা
চয়ন শুরু হয়েছে। এম আহমদ লি:
কোম্পানির এই ৮টি
বাগানের মধ্যে সিলেটের হাবিবনগর বাগানে গতকাল চা চয়ন শুরুর আগে চা-শ্রমিকরা পূজা দিয়ে মহাসমারোহে চা-চয়ন শুরু করে। এ সময় বাগানের ম্যানেজার হুমায়ূন কবির লিটন, জিএম সৈয়দ মহীউদ্দিনসহ অনেকেই
উপস্থিত ছিলেন।
বৈরী আবহাওয়া
চলছে। কাঙ্ক্ষিত উত্পাদন লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছা সম্ভব কিনা সংশয়
ব্যক্ত করে ম্যানেজার হুমায়ূন কবির
লিটন গতকাল
ইত্তেফাককে বলেন, ‘‘গত বছর অক্টোবর, নভেম্বর মাসে বাগান এলাকায়
একেবারেই বৃষ্টি
হয়নি। ভোরে বাগানে বেশ কুয়াশা পড়ে। এটা বৃষ্টি না হওয়ার লক্ষণ।’’ তিনি জানান, সপ্তাহ খানেকের মধ্যে বৃষ্টি না হলে বাগানগুলো মারাত্মক সংকটে পড়বে। হুমায়ূূন কবির জানান,
মার্চে বৃষ্টি
খুবই প্রয়োজন। বলা যায় বাগানের জন্য আশীর্বাদ। কিন্তু
বৃষ্টির দেখা নেই।
বৃষ্টির স্পর্শ
নেই বিধায় সিলেটের সব বাগানেই উত্পাদনে ভাটা ভাব-জানিয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এ বছর হাবিবনগর বাগানের ৩০৫ হেক্টর জমিতে
চা-চাষ হয়েছে। উত্পাদন লক্ষ্যমাত্রা ৫ লাখ ২৫
হাজার মেট্রিক টন। কিন্তু বৈরী
আবহাওয়ায় চিন্তিত
বাগান কর্তৃপক্ষ।
দেশের মোট ১৬০টি
চা বাগানের মধ্যে সিলেট অঞ্চলেই রয়েছে ১৩৮টি। যার সবগুলোতেই
একই অবস্থা বিরাজমান। সূত্র জানায়, এবার সারাদেশে চা উত্পাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৬৫ মিলিয়ন কেজি। অর্থাত্ ৬ কোটি ৫০ লাখ কেজি।
এদিকে গত জানুয়ারি
থেকে এ পর্যন্ত চা-বাগান এলাকায় মাত্র ৫৫ মি.মি. বৃষ্টি
হয়েছে। যদিও কিছুটা সবুজাভ দৃশ্য
ফিরে এসেছে, তবে এই বৃষ্টি চা উত্পাদনের জন্য যথেষ্ট নয় বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
অন্যদিকে ২০১৪
সালেও বৈরী আবহাওয়া, সেচ সংকটজনিত কারণে সিলেটে আশানুরূপ চা-উত্পাদন হয়নি। ২০১৩ সালের চেয়ে উত্পাদন সোয়া ১২ লাখ কেজি কম ছিল। মার্চ থেকে অক্টোবর
পর্যন্ত চা উত্পাদনের প্রধান মৌসুম।
সুষম আবহাওয়ার
অভাবে এ বছর চা-উত্পাদন ব্যাহত হচ্ছে। চা-বোর্ডের পরিচালক মঈন উদ্দিন মনে করেন, ১৪ সালে উত্পাদন কিছুটা কম হলেও এবার তা
পুষিয়ে নেয়া যাবে। ফেব্রুেয়ারি, মার্চে যে বৃষ্টি হয়েছে তাতে খরা ভাব কাটতে শুরু করেছে।