টানা
অবরোধ-হরতালের মধ্যে চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে দেশের পণ্য রপ্তানিতে
আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। তবে প্রবৃদ্ধি কিছুটা বেড়েছে। সাত মাস
শেষে প্রবৃদ্ধি ছিল ২ দশমিক ০৬ শতাংশ। আর আট মাসে তা বেড়ে হয়েছে ২ দশমিক
৪৩ শতাংশ। যদিও গত অর্থবছরে এই সময়ে প্রবৃদ্ধি ছিল ১৩ দশমিক ৯৬ শতাংশ।
চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের প্রথম আট মাস অর্থাৎ
জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে ২ হাজার ৩১ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই
আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের ১ হাজার ৯৮ কোটি ডলারের চেয়ে ২ দশমিক ৪৩
শতাংশ বেশি। একই সঙ্গে তা ২ হাজার ১২৮ কোটি ডলারের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে
সাড়ে চার শতাংশ কম।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) গতকাল রোববার এই হালনাগাদ
পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যায়, তৈরি পোশাক, পাট ও পাটজাত পণ্য,
চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, হোম টেক্সটাইল, কৃষিজাত পণ্য, বাইসাইকেলসহ প্রধান
রপ্তানি পণ্যে দশমিক ৫৪ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এ জন্যই
সামগ্রিকভাবে দেশের পণ্য রপ্তানিতে ইতিবাচক ধারা অব্যাহত আছে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ রপ্তানিকারক সমিতির (ইএবি) সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী প্রথম আলোকে
বলেন, ‘প্রবৃদ্ধি যেটুকু হয়েছে সেটিই বাস্তবতা। চলমান রাজনৈতিক অবস্থা,
ডলারের বিপরীতে ইউরোর দরপতনসহ নানা কারণে আমরা প্রতিদিনই সক্ষমতা হারাচ্ছি।
তাই রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নয়, বরং বাজার ধরে রাখাই এখন বড়
চ্যালেঞ্জ।’ তবে রাজনৈতিক অস্থিরতা না থাকলে রপ্তানি আয় আরও বেশি হতো বলে
মন্তব্য করেন তিনি।
সালাম মুর্শেদী আরও বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটের কারণে
আন্তর্জাতিক বাজারে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন² হচ্ছে। ক্রেতারা সুযোগ
নিচ্ছে। ক্রয়াদেশ কম আসছে। এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে শিগগিরই রাজনৈতিক
সমস্যার সমাধান ও সরকারের নীতি-সহায়তা প্রয়োজন।
ইপিবির দেওয়া তথ্যানুযায়ী, শুধু ফেব্রুয়ারি মাসে ২৫১
কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই আয় আলোচ্য সময়ের ২৭০ কোটি ডলারের
চেয়ে ৭ শতাংশ কম হলেও গত অর্থবছরের ফেব্রুয়ারির চেয়ে ৫ শতাংশ বেশি। গত
জানুয়ারিতে রপ্তানি আয় হয় ২৮৮ কোটি ডলার, প্রবৃদ্ধি ছিল ৪ দশমিক ৭৭
শতাংশ।
এদিকে সামগ্রিক রপ্তানি আয়ের মধ্যে সর্বোচ্চ তৈরি পোশাক
খাত থেকেই এসেছে, যা ৮১ দশমিক ৪৮ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে খাতটির রপ্তানি আয় ১
হাজার ৬৫৫ কোটি ডলার। এই আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের ১ হাজার ৬১৯ কোটি
ডলারের চেয়ে ২ দশমিক ৫৭ শতাংশ বেশি, তবে এ সময়ের ১ হাজার ৭২৪ কোটি ডলারের
লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪ শতাংশ কম।
প্রথম আট মাসে তৈরি পোশাক রপ্তানির মধ্যে নিট ও ওভেন পোশাক
থেকে আয় হয়েছে যথাক্রমে ৮১৩ ও ৮৪১ কোটি ডলার। শতকরা হারে নিটে ২ দশমিক
৮৮ এবং ওভেনে ২ দশমিক ২৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। যদিও এ সময় নিট ও ওভেন
পোশাকের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা ছিল যথাক্রমে ৮৪৭ ও ৮৭৭ কোটি ডলার। অর্থাৎ
লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে নিটে রপ্তানি কম হয়েছে ৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ আর ওভেনে ৪
শতাংশ কমেছে।
এদিকে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানিতেও ইতিবাচক ধারা অব্যাহত
আছে। এ সময়ে এই খাতের রপ্তানি আয় ৫৬ কোটি ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই
সময়ের চেয়ে ৬ দশমিক ৪০ শতাংশ এবং ৫৩ কোটি ডলারের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬
দশমিক ২৭ শতাংশ বেশি। পাট খাতের ৫৬ কোটি ডলারের রপ্তানি আয়ের মধ্যে কাঁচা
পাট থেকে ৭, পাটের সুতা থেকে ৩৪ এবং পাটের বস্তা থেকে আয় এসেছে ১০ কোটি
ডলার।
অন্যদিকে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যে ৭৩ কোটি ৯৭ লাখ ডলার
আয় হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে দশমিক ৫৪ শতাংশ বেশি। এর
মধ্যে প্রস্তুতকৃত চামড়া থেকে ২৬ কোটি ৮৫ লাখ, চামড়াজাত পণ্য থেকে ১৪
কোটি ৭৬ লাখ এবং চামড়ার পাদুকা থেকে ৩২ কোটি ৩৪ লাখ ডলার আয় হয়।
আলোচ্য সময়ে কৃষিজাত পণ্য রপ্তানিতে আয় হয়েছে ৪০ কোটি
৩১ লাখ ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১ দশমিক ৮১ শতাংশ। এ ছাড়া হোম টেক্সটাইলে
৫১ কোটি ৭১ লাখ, বাইসাইকেলে ৮ কোটি ৪৬ লাখ, প্লাস্টিক পণ্যে ৬ কোটি ৮১ লাখ,
আসবাবপত্রে ২ কোটি ২১ লাখ ডলার আয় হয়েছে।
চলতি অর্থবছরের রপ্তানি আয়ের মোট লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে
৩ হাজার ৩২০ কোটি ডলার। গত অর্থবছর আয় হয়েছিল ৩ হাজার ১৮ কোটি ডলার, তখন
প্রবৃদ্ধি ছিল ১১ দশমিক ৬৫ শতাংশ।