চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকায় নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় সরগরম হয়ে
উঠেছে। প্রতীক বরাদ্দ পেয়েই একাধিক প্রার্থীর পক্ষে নগরীতে
ব্যাবিট্যাক্সিযোগে মাইকে প্রচারণা শুরু হয়েছে। আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র
প্রার্থী আ.জ.ম নাছির পেয়েছেন ‘হাতী’ প্রতীক আর বিএনপি সমর্থিত মেয়র
প্রার্থী এম মনজুর আলম পেয়েছেন ‘কমলা লেবু’ প্রতীক। এই প্রতীক দু’টিই তাদের
কাঙ্ক্ষিত ছিল। নগরীতে প্রধান দু’দল সমর্থিত দু’জন মেয়র প্রার্থী ছাড়াও
আরো কয়েকজন মেয়র এবং কাউন্সিলর প্রার্থী হ্যান্ডমাইকযোগে প্রচারণা
চালাচ্ছেন। প্রচারণার সময় কম হওয়ায় ৪১টি ওয়ার্ডে লোকজনের সাথে সরাসরি
সাক্ষাত্ কোনভাবেই সম্ভব হবে না বলে সংশ্লিষ্ট মেয়র প্রার্থিগণ জানান। তবে
গাড়িযোগে এবং পায়ে হেঁটে অধিকাংশ এলাকায় পৌঁছানোর চেষ্টা চালাবেন।
চট্টগ্রামে প্রধান দুই মেয়র প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগ সমর্থিত আ.জ.ম
নাছির উদ্দিন গত মঙ্গলবার থেকেই আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারণা শুরু করেছেন। তবে
বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী এম মনজুর আলম গতকাল শুক্রবার থেকে আনুষ্ঠানিক
প্রচারণা শুরু করেছেন। তিনি কাট্টলীস্থ মোস্তফা হাকিম কলেজ সংলগ্ন মসজিদে
জুমার নামাজ আদায়ের পর মা-বাবার কবর জিয়ারত শেষে নগরীর ৪১নং ওয়ার্ডের
লালদিয়ার চর এলাকা থেকে প্রচারণা শুরু করেন।
গত মঙ্গলবার থেকেই
নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা শুরু হয়েছে। সময়ের স্বল্পতার কারণে মেয়র
প্রার্থীর পক্ষে সবার বাসায় যাওয়া সম্ভব না হলেও তাদের পক্ষে কেন্দ্রীয় ও
স্থানীয় নেতৃবৃন্দ প্রতিটি ভোটারের নিকট পৌঁছার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
ইতিমধ্যে প্রধান দুই মেয়র প্রার্থীর পক্ষে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ
আলাদা-আলাদা প্রচারণা চালাচ্ছেন। আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে
কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, প্রচার সম্পাদক ড. হাছান
মাহমুদসহ স্থানীয় সংসদ সদস্য ও নেতৃবৃন্দ প্রচারণা চালিয়েছেন। বিএনপি
সমর্থিত এম মনজুর আলমের পক্ষে কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল
নোমান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিনসহ স্থানীয়
নেতৃবৃন্দ প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। মেয়র প্রার্থীর সহধর্মিণীসহ পরিবারের
সদস্যরাও প্রচারণায় নেমে পড়েছেন। আবার প্রার্থিগণ ঘরোয়া বৈঠক ও সভা-সমাবেশ
করেও তাদের প্রচারণা চালানো হচ্ছে। মেয়র প্রার্থিগণ প্রতিদিন প্রচার
চালালেও দলীয় শীর্ষ নেতৃবৃন্দ গত কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলর
প্রার্থীদের মধ্যে সমঝোতা চালানোর কাজে ব্যস্ত ছিলেন। দলীয়ভাবে একক
প্রার্থী দেয়ার চেষ্টা চালিয়েও গত বৃহস্পতিবার প্রত্যাহারের শেষ দিনেও তেমন
একটা সফলতা আসেনি বলে জানা যায়। নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ
ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সমর্থিত একাধিক ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী রয়েছে।
একইভাবে বিএনপি ১০টি ওয়ার্ডে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীকে সমর্থন দেয়ার পরও
আরো একাধিক ওয়ার্ডে তাদের প্রার্থী রয়েছে। কয়েকটি ওয়ার্ডে বিএনপির একাধিক
প্রার্থী রয়েছে। ফলে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থিগণ অধিকাংশ
এলাকায় কাউন্সিলর প্রার্থী ছাড়াই প্রচারণা চালাতে হচ্ছে।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে মেয়র পদে ১২ জন এবং কাউন্সিলর পদে ২৭৪ জন
প্রার্থী রয়েছেন। এর মধ্যে ৪১টি ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২১৩ জন
প্রার্থী রয়েছেন। ১৪টি সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে প্রার্থী রয়েছেন ৬১
জন। ৪১টি সাধারণ ওয়ার্ডের প্রতিটি পদের জন্য গড়ে ৫ জনের অধিক প্রার্থী
রয়েছেন। ১৪টি সংরক্ষিত মহিলা আসনের জন্য ৪ জনের বেশি প্রার্থী রয়েছেন।
প্রতিটি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থিগণও ইতোমধ্যে প্রচারণায় নেমে পড়েছেন।
গতকাল প্রতীক বরাদ্দ পেয়ে এবং মাইকের অনুমতি নিয়ে প্রচারণায় নেমে পড়েছেন।
আজ শনিবার থেকে প্রচার-প্রচারণা আরো ব্যাপকভাবে হবে। আগামী কয়েক দিনে
প্রতীক সম্বলিত পোস্টারেও ছেয়ে যাবে পুরো নগরী। প্রচার-প্রচারণায় আচরণবিধি
লংঘন হচ্ছে কিনা তা তদারকি করার জন্য নির্বাচন কমিশনের ১৪টি ভিজিল্যান্স
টিম মাঠে কাজ করা শুরু করছে। তাছাড়া নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণও আলাদাভাবে
আচরণবিধি লংঘনের বিষয়টি দেখবেন।