Environmental news - কনকচাঁপা

হলুদের পসরা সাজিয়ে ফুটেছে কনকচাঁপা। বাংলাদেশ শিশু একাডেমীর বাগান থেকে তোলা l ছবি: লেখক
বিকেল শেষে সন্ধ্যা নামে প্রকৃতির বুকে। তখন দু-একটা বলাকা, সন্ধ্যার কাক উড়ে যায় আকাশে। রাত হয়। পাতি সরালিরা শিষ দিয়ে আকাশ কাঁপিয়ে উড়ে যায়। দোয়েলের ডাকে সকাল হয়। সেটি বসন্তের প্রথম সকাল। বসন্ত এক অনন্ত যৌবনের ঋতু। পলাশ, মাধবী, গ্লিরিসিডিয়া, ব্রনফেলসিয়া, জংলি বাদাম, মনিমালা ও অশোক ফুলের উচ্ছলতা নিয়ে বসন্ত আসে। ফুল ফুটুক আর নাই ফুটুক বসন্ত তার চিরকালের নিয়মেই এসে ধরা দেয়। রমনা পার্কের ভূস্পর্শী গ্লিরিসিডিয়া, মনিমালার বেগুনি ফুল তরুতলে ঝরে পড়ে। অসংখ্য ভোমরা ভিড় জমায় ফুলে ফুলে। গ্রামবাংলায় ভাঁট ফুলের গন্ধে গ্রামীণ জনপদ মেঠো হয়ে যায়। বসন্তের শুরুতেই মাধবী ফুটেই বিদায় নেয়।
বসন্তে ফোটা নানান রঙের ফুলের মধ্যে কনকচাঁপা অন্যতম। বসন্তে ফোটার পর ফুল থাকে গ্রীষ্মের শেষাবধি। জানামতে ঢাকায় দুটি মাত্র কনকচাঁপা গাছ আছে। একটি বাংলাদেশ শিশু একাডেমীর বাগানে, অপরটি রমনা পার্কে। রমনার উত্তরায়ণ গেট থেকে ঢুকে দক্ষিণ দিকে আসতে রমনার সবচেয়ে বড় পলাশগাছটির পূর্ব পাশে আছে গাছটি।
কনকচাঁপার ইংরেজি নাম গোল্ডেন চাম্পাক। বৈজ্ঞানিক নাম Ochna squarrosa। সাধারণত ঘন গুল্মের জঙ্গল ও পত্রঝরা বনে জন্মে। একসময় সিলেট ও চট্টগ্রামের বনে অধিক দেখা যেত। এখন দুষ্প্রাপ্য হয়ে গেছে। বাংলাদেশ বাদে মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা ও দক্ষিণ ভারতের প্রাকৃতিক বনে জন্মে। কনকচাঁপা ছোট গাছ, চার থেকে সাত মিটার উঁচু, তবে এক মিটার উঁচু গাছেও ফুল ধরে। পত্রমোচী বৃক্ষ, শীতের সময় গাছের সব পাতা ঝরে পড়ে তরুতলে। কনকচাঁপার পাতা ডিম্বাকার, অখণ্ড, বোঁটা খাটো এবং আগা চোখা। বসন্তের মাঝামাঝি সময়ে তামাটে রঙের নতুন কচি পাতার সঙ্গে উজ্জ্বল হলুদ বর্ণের ফুল আসে। ফুল সুগন্ধি। ফুল ফোটা শুরু হলে ধীরে ধীরে ছোট ছোট থোকায় পুরো গাছ ভরে যায়। ফুল তিন-চার সেন্টিমিটার চওড়া, পাপড়ি ১২টি, মুক্ত, বৃত্তাংশের সমান লম্বা। পুংকেশর বহু, সোনালি। ফল ০.৫ সেমি চওড়া ও গোলাকার, কালো ও রসাল। বীজ থেকে চারা গজায়। গাছের বাকল হজমকারী টনিক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। কাঠ দিয়ে হাঁটার লাঠি তৈরি করা হয়। সাঁওতাল আদিবাসীরা এর শিকড় সাপের কামড়ের চিকিৎসায় ব্যবহার করেন। ভারতীয় আদিবাসীরা নানান ধরনের মেয়েলি চিকিৎসায় এ গাছের বিভিন্ন অংশ ব্যবহার করে থাকেন।
গাছটি সম্পর্কে নিসর্গী অধ্যাপক দ্বিজেন শর্মা জানান, তিনি পাথারিয়া পাহাড়ে বহু খোঁজাখুঁজির পরে একটি গাছও পাননি। তবে ১০ বছর আগে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার ছোট টিলায় এ গাছ দেখেছিলেন। এখন টিকে আছে কি না সে ব্যাপারে তাঁর কাছে কোনো তথ্য নেই।
সুন্দর এ ফুলের গাছটি আকারে ছোট হওয়ায় কাঠুরিয়া কিংবা সাধারণ মানুষ সহজেই কেটে ফেলে। যে কারণে গাছটি প্রাকৃতিক পরিবেশে দুর্লভ হয়ে গেছে। গাছটি সংরক্ষণে বন বিভাগ এগিয়ে আসতে পারে।
-

Latest

Popular Posts

Popular Posts

Popular Posts