বাঁশঝাড়ের
মালিক নিজেই দুটি বাঁশ কাটতে এসেছিলেন সকালবেলায়। একটি বাঁশ কেটে টেনেটুনে
তিনি বের করেন। তখন লক্ষ করেন একজোড়া পাখি আশপাশে অস্থিরভাবে
উড়ছে-ঘুরছে ও মাঝেমধ্যে হুমকি-ধমকি ও গালাগালের ভাষায় ডাকাডাকি করছে। একটি
পাখি খুবই সুন্দর। ঘাড়-গলা-মাথা কালো, মাথার পেছন দিকে চোখা ঝুঁটিটাও
কালো। বাদবাকি সারা শরীর দুধের মতো সাদা। লম্বা দুটি লেজের পালকও সাদা।
অন্য পাখিটার রং অন্য রকমই। ঘাড়-গলা-মাথা ও মাথার ঝুঁটি পুরুষটার মতোই।
লেজ বুলবুলি পাখির মতো। বুক-পেট সাদাটে। পিঠ ও লেজের ওপর ভাগটা
লালচে-বাদামি। এই পাখি তিনি গরমকালে বাঁশঝাড়-আম-লিচুবাগানে মাঝেমধ্যেই
দেখে থাকেন। পুরুষটির সৌন্দর্যেরও কোনো তুলনা হয় না। তা ওরা এমন অস্থির
কেন! ভাবতে ভাবতেই তিনি দা দিয়ে কোপাতে শুরু করলেন আরেকটি বাঁশের গোড়ায়।
এবার পাখি দুটির যেন মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড় হলো। আরে! তিনটি বাচ্চা দেখি
উড়ে গিয়ে ওপাশের একটা নিচু ঝোপের মাথায় বসেছে! পাখি দুটি ওদের মাথার ওপর
দিয়ে বারবার উড়ে যাচ্ছে। আনাড়ি বাচ্চা! উড়ল কোথা থেকে! উড়তে তো ওরা
শেখেনি ভালোভাবে। তাকালেন উনি ওপরের দিকে। দেখতে পেলেন ঝুলে-নুয়ে পড়া
একখানা মোটা কঞ্চির গাঁটে সুন্দর একটি বাসা, সে বাসায় বসা একটি মাত্র
ছানার শুধু চোখ আর ঠোঁট দেখা যাচ্ছে। না, বাঁশটিতে আর কোপ দিলেন না
তিনি। বাসায় বাচ্চা থাকতে আর এই বাঁশটি কাটবেন না তিনি। মহা আতঙ্কে
ভালোভাবে উড়তে না শেখা বাচ্চা তিনটি বাসা ছেড়ে দিয়েছে। ছোটটি অসহায়ভাবে
বসে আছে বাসায়।
কাটা বাঁশটির কঞ্চি ছেঁটে বাঁশ ঘাড়ে করে রওনা হয়ে গেলেন তিনি।
ওই ঘটনার পরদিন আমি যাই ওই বাঁশঝাড়টির কাছে, সঙ্গে সেই মালিকও। না, আশপাশে অনেক খুঁজে মা-বাবা পাখি বা উড়ে যাওয়া ছানা তিনটির সন্ধান মিলল না। বাসার ছানাটি আছে। অস্থির কণ্ঠে করুণ সুরে কান্না ছড়াচ্ছে চারদিকে। প্রায় ঘণ্টা তিনেক রইলাম আমরা। না, এল না ওর মা-বাবা। হয়তো বা উড়তে শেখা ছানা তিনটিকে নিয়ে সরে গেছে নিরাপদ দূরত্বে। বাঁশ কাটা ও টেনে বের করার ভয়ংকর শব্দে ওরা হয়তো মহা আতঙ্কিতই হয়ে পড়েছিল।
এই এপ্রিলেই আমার এক পুরোনো বন্ধুর সঙ্গে ঢাকা থেকে একটা এক্সপ্রেসে চেপে প্রায় ৪৫০ কিলোমিটার দূরের দিনাজপুরের বিরল উপজেলার একটি গ্রামে গিয়েছিলাম বিরল একটি বড় পাখির সন্ধানে। খবর পেয়েই গিয়েছিলাম। দুই দিন ঘোরার পরে পাখিটিকে বহুদূর থেকে দেখি—জৌলুশ জৌলুশ ক্যামেরার রেঞ্জের বাইরেই বলা যায়। অনেক চেষ্টা করেও ওকে বাগে আনতে পারছিলাম না। ও ছিল কোড়াই বিলে। বিলটি এখন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তত্ত্বাবধানে।
ওই কোড়াই বিলে পাখি দেখতে ১৯৭৫ থেকে আজ পর্যন্ত বার ছয়েক গিয়েছি। অনেক পরিযায়ী পাখি নামত আগে। কমে গেছে এখন অনিবার্য কারণে। নউল বিলটাও পাখি ভরপুর ছিল ’৮৫-’৮৬ সাল পর্যন্ত। এখন তো দৈন্যদশা।
আম-লিচু বাগানে ঘুরে ঘুরে ফিরে এলাম আবার ঢাকায়। সারা পথেই দুটো কষ্টের তবলা বাজল বুকের ভেতরে। বিরল পাখিটির ছবি তুলতে না পারা, ওই বাসায় মা-বাবার খাবার মুখে ফেরার অপেক্ষায় থাকা দুধরাজের ছানাটি। আর ফিরবে না বাবা-মা। ছানাটি তা জানে না, বোঝে না। হ্যাঁ, পাখিটির নাম দুধরাজ। ছেলে পাখির মাপ লেজসহ ৫০ সেমি। মেয়েটি ২০ সেমি। মূল খাদ্য পোকা-পতঙ্গ-ফুলের মধু। ডিম পাড়ে চারটি। পাখিটির দেখা সারা দেশেই মেলে। তবে কম। ক্বচিৎ ঢাকা শহরের উপকণ্ঠে দেখা মেলে। দুঃসাহসী পাখি। বাসার সীমানায় এলে শিয়াল-বেজি-কুকুর-বিড়াল কাউকেই আক্রমণ করতে দ্বিধা করে না। পাখির রাজা ফিঙে-সিংহরাজও এদের সমঝে চলে। হুমকি-ধমকি মারতেও ওস্তাদ এরা।
কাটা বাঁশটির কঞ্চি ছেঁটে বাঁশ ঘাড়ে করে রওনা হয়ে গেলেন তিনি।
ওই ঘটনার পরদিন আমি যাই ওই বাঁশঝাড়টির কাছে, সঙ্গে সেই মালিকও। না, আশপাশে অনেক খুঁজে মা-বাবা পাখি বা উড়ে যাওয়া ছানা তিনটির সন্ধান মিলল না। বাসার ছানাটি আছে। অস্থির কণ্ঠে করুণ সুরে কান্না ছড়াচ্ছে চারদিকে। প্রায় ঘণ্টা তিনেক রইলাম আমরা। না, এল না ওর মা-বাবা। হয়তো বা উড়তে শেখা ছানা তিনটিকে নিয়ে সরে গেছে নিরাপদ দূরত্বে। বাঁশ কাটা ও টেনে বের করার ভয়ংকর শব্দে ওরা হয়তো মহা আতঙ্কিতই হয়ে পড়েছিল।
এই এপ্রিলেই আমার এক পুরোনো বন্ধুর সঙ্গে ঢাকা থেকে একটা এক্সপ্রেসে চেপে প্রায় ৪৫০ কিলোমিটার দূরের দিনাজপুরের বিরল উপজেলার একটি গ্রামে গিয়েছিলাম বিরল একটি বড় পাখির সন্ধানে। খবর পেয়েই গিয়েছিলাম। দুই দিন ঘোরার পরে পাখিটিকে বহুদূর থেকে দেখি—জৌলুশ জৌলুশ ক্যামেরার রেঞ্জের বাইরেই বলা যায়। অনেক চেষ্টা করেও ওকে বাগে আনতে পারছিলাম না। ও ছিল কোড়াই বিলে। বিলটি এখন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তত্ত্বাবধানে।
ওই কোড়াই বিলে পাখি দেখতে ১৯৭৫ থেকে আজ পর্যন্ত বার ছয়েক গিয়েছি। অনেক পরিযায়ী পাখি নামত আগে। কমে গেছে এখন অনিবার্য কারণে। নউল বিলটাও পাখি ভরপুর ছিল ’৮৫-’৮৬ সাল পর্যন্ত। এখন তো দৈন্যদশা।
আম-লিচু বাগানে ঘুরে ঘুরে ফিরে এলাম আবার ঢাকায়। সারা পথেই দুটো কষ্টের তবলা বাজল বুকের ভেতরে। বিরল পাখিটির ছবি তুলতে না পারা, ওই বাসায় মা-বাবার খাবার মুখে ফেরার অপেক্ষায় থাকা দুধরাজের ছানাটি। আর ফিরবে না বাবা-মা। ছানাটি তা জানে না, বোঝে না। হ্যাঁ, পাখিটির নাম দুধরাজ। ছেলে পাখির মাপ লেজসহ ৫০ সেমি। মেয়েটি ২০ সেমি। মূল খাদ্য পোকা-পতঙ্গ-ফুলের মধু। ডিম পাড়ে চারটি। পাখিটির দেখা সারা দেশেই মেলে। তবে কম। ক্বচিৎ ঢাকা শহরের উপকণ্ঠে দেখা মেলে। দুঃসাহসী পাখি। বাসার সীমানায় এলে শিয়াল-বেজি-কুকুর-বিড়াল কাউকেই আক্রমণ করতে দ্বিধা করে না। পাখির রাজা ফিঙে-সিংহরাজও এদের সমঝে চলে। হুমকি-ধমকি মারতেও ওস্তাদ এরা।