বিজ্ঞানীরা বলছেন, প্রচলিত মোটরগাড়িগুলোতে ব্যবহৃত জীবাশ্ম জ্বালানির বিকল্প হবে এই দুই প্রযুক্তি, যা পরিবেশবান্ধবও।
বৈদ্যুতিক গাড়িগুলো ব্যাটারিতে মজুত করা শক্তি ব্যবহার করে চলে, আর হাইড্রোজেন ফুয়েল সেল বা জ্বালানিকোষযুক্ত যানবাহনগুলোয় জ্বালানি হিসেবে থাকে হাইড্রোজেন। এ দুটি প্রযুক্তির কিছু সীমাবদ্ধতা থাকলেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের গাড়ি বেশ সম্ভাবনাময়।
মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির রসায়ন প্রকৌশলী লরেন্স ড্রজাল বলেন, নতুন দুটি প্রযুক্তির মধ্যে প্রতিযোগিতা নেই। এরা পরস্পরের সমান এবং বিকল্প হতে পারে। চিরাচরিত গাড়িগুলোতে থাকে অন্তর্দহ ইঞ্জিন। আর ব্যাটারিচালিত গাড়িতে কোনো ইঞ্জিন থাকে না, এর বদলে ব্যাটারি বা বৈদ্যুতিক মোটরের শক্তি ব্যবহার করা হয়।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বৈদ্যুতিক মোটরগাড়ির জনপ্রিয়তা বাড়ছে, যদিও এগুলো সেই ১৯ শতকের শুরুর দিকেই চালু হয়েছিল। কিন্তু ২০ শতকের শুরুর দিকে ইঞ্জিনচালিত গাড়ির ব্যাপক প্রসারের ফলে প্রতিযোগিতার দৌড়ে বৈদ্যুতিক গাড়িগুলো অনেক পিছিয়ে পড়ে। ব্যাটারির অপ্রতুলতার কারণেই বৈদ্যুতিক গাড়িগুলো তেমন সাফল্য পায়নি। ১৯৭০ ও ১৯৮০-র দশকে জ্বালানি-সংকটের কারণে বৈদ্যুতিক গাড়ির প্রতি মানুষের আগ্রহ আবার ফিরে আসে। ২০০৮ সালে টেসলা মোটরস রডস্টার এবং নিসান লিফের মতো সম্পূর্ণ বিদ্যুৎ নির্ভর গাড়ি নির্মিত হওয়ার পর থেকে বৈদ্যুতিক গাড়িগুলো আবার জনপ্রিয় হতে শুরু করে। এগুলো মূলত রিচার্জ করার উপযোগী লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারিতে চলে।
অন্যদিকে, হাইড্রোজেন ফুয়েল সেল গাড়িগুলোও বৈদ্যুতিক মোটরের সাহায্যে চলে। কিন্তু এগুলো ব্যাটারির শক্তি ব্যবহার করার পরিবর্তে একটি জ্বালানি কোষের সাহায্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। এ ক্ষেত্রে সাধারণত বাতাসের অক্সিজেন এবং গাড়িতে মজুত হাইড্রোজেন গ্যাস ব্যবহৃত হয়।
পিটসবুর্গের কার্নেগি মেলন ইউনিভার্সিটির যন্ত্রকৌশলী শন লিটস্টার বলেন, ব্যাটারি ও ফুয়েল সেলের মধ্যে মিল রয়েছে। তবে পার্থক্যটা হলো ফুয়েল সেলের সাহায্যে মজুত জ্বালানি থেকে রূপান্তরিত জ্বালানি আলাদা করা যায়।
ফুয়েল সেল গাড়ির সহায়ক হিসেবে বেশ কয়েক ধরনের জ্বালানি ব্যবহার করা যায়। তবে এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে প্রচলিত জ্বালানি হিসেবে হাইড্রোজেন ব্যবহৃত হয়। অক্সিজেন ও হাইড্রোজেন বিক্রিয়া করে কেবল পানি ও তাপ উৎপাদন করে, এতে কোনো ধরনের নির্গমন হয় না। বাজারে এখন দুটি ফুয়েল সেল গাড়ি পাওয়া যায়: হুন্দাই টাকসন এবং টয়োটা মিরাই।
বৈদ্যুতিক গাড়িগুলো কোনো ধরনের জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার না করায় সাধারণ ইঞ্জিনচালিত গাড়ির ভালো বিকল্প হতে পারে। কিন্তু ব্যাটারি চার্জ করার জন্য যদি কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের সাহায্য নেওয়া হয়, তাতে পরিবেশের লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। আর ফুয়েল সেল গাড়িগুলোও কেবল হাইড্রোজেন ব্যবহার করলেই পরিবেশের ক্ষতি না হওয়ার নিশ্চয়তা মিলবে।
বৈদ্যুতিক গাড়িগুলোর অসুবিধা হলো ব্যাটারিতে যতক্ষণ চার্জ থাকবে—ততক্ষণই এটি চলতে পারবে। ছোটখাটো দূরত্বে এটা কোনো সমস্যা না হলেও দূরপাল্লায় বারবার ব্যাটারি চার্জ করার প্রয়োজন পড়বে। তবে ব্যাটারির প্রযুক্তি উন্নয়নের মাধ্যমে এ সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হতে পারে। আশার কথা হলো, ব্যাটারিচালিত ও ফুয়েল সেল গাড়ি—দুটি প্রযুক্তিই দ্রুত সমৃদ্ধ হচ্ছে।