Science and Technology news - যে গাড়ি চলবে পৃথিবী ও মঙ্গলে

     
নিশানের তৈরি স্বয়ংক্রিয় গাড়ি
যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণাপ্রতিষ্ঠান নাসা ও গাড়ি নির্মাতাপ্রতিষ্ঠান নিশান স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তির গাড়ি তৈরির জন্য পাঁচ বছরের একটি চুক্তি করেছে। এ চুক্তি অনুযায়ী, নিশানের স্বয়ংক্রিয় ও পরিবেশবান্ধব গাড়ি তৈরিতে সহায়তা করবে নাসা।

নিশানের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ভবিষ্যতে তারা এমন গাড়ি তৈরি করবে, যার জন্য কোনো চালক প্রয়োজন হবে না এবং এ গাড়ি থেকে পরিবেশ দূষিত করে এমন কোনো উপাদান বা বর্জ্য উৎপন্ন হবে না। পৃথিবীতে চলার উপযোগী গাড়ি তৈরির পাশাপাশি মহাশূন্যে চালানো যায় এমন গাড়ি তৈরিতেও কাজ করবে নিশান। ক্যালিফোর্নিয়ার এমস রিসার্চ সেন্টারে নিশান ও নাসার তৈরি এই গাড়ি পরীক্ষা করে দেখা হবে।
নাসা ও নিশান এক যৌথ বিবৃতিতে জানিয়েছে, নিশানের সিলিকন ভ্যালির গবেষণা বিভাগে নাসার গবেষকেরা একসঙ্গে কাজ করবেন।
নিশান এরই মধ্যে এমন গাড়ি তৈরি করেছে যা নিজেই পথ চিনে চলতে পারে। স্বয়ংক্রিয় গাড়ির প্রযুক্তিকে আরও উন্নত করতেই নাসা ও নিশান যৌথভাবে কাজ করবে। এ ছাড়া মহাকাশে ব্যবহারের উপযোগী রোবট রোভারেও এই প্রযুক্তি ব্যবহারের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা হবে।

চলতি বছরের শেষ নাগাদ স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তির একটি গাড়ি বাজারে আনতে পারে নিশান।
নিশানের কর্মকর্তারা বলছেন, ‘নাসার রোবোটিক প্রযুক্তিবিদ ও আমাদের স্বয়ংক্রিয় গাড়ি প্রযুক্তিবিদদের সমন্বয়ে গড়া দলটি একত্রে কতদূর যেতে পারে, তা দেখতে চাই।’
 
ভবিষ্যতের গাড়ি যেমন হবে
গুগলের তৈরি স্বয়ংক্রিয় গাড়ি
কেমন হবে ভবিষ্যতের গাড়ি? চার চাকা, সর্বদা ইন্টারনেট সংযোগ আর চালকের বিশ্রাম নেওয়ার সুবিধা। গাড়ি ও প্রযুক্তি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো মিলে ভবিষ্যতের এমনই গাড়ি তৈরির কাজ শুরু করে দিয়েছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের লাস ভেগাসে অনুষ্ঠিত কনজুমার ইলেকট্রনিকস শো (সিইএস) উপলক্ষে এ ধরনের স্বয়ংক্রিয় গাড়ির দেখা মিলেছে।
কনজুমার ইলেকট্রনিকস শোতে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ গাড়ি ও উন্নত প্রযুক্তি সুবিধার গাড়ি চোখে পড়েছে, যা আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই বাজারে চলে আসবে। সিইএসে এমনই একটি উচ্চাভিলাষী গাড়ি প্রদর্শন করছে জার্মানির গাড়ি নির্মাতাপ্রতিষ্ঠান ডেইমলার। বৈদ্যুতিক শক্তির মার্সিডিজ-বেঞ্জ এফ০১৫ নামের গাড়িটি চালকবিহীনভাবেই লাস ভেগাসের রাস্তায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলেছে এবং দর্শকদের চমক দিয়েছে। কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত এই গাড়িটিতে যে বুদ্ধিমত্তা যুক্ত হয়েছে তাতে গাড়িটি পথচারীকে সাহায্যও করতে পারে।
ভবিষ্যতের গাড়ির এক ঝলক
এএফপিকে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে ডেইমলারের প্রধান ডায়েটার জেটসি বলেছেন, ‘আমরা আগেও স্বয়ংক্রিয় গাড়ি তৈরি নিয়ে কথা বলেছি। আমরা আগে দেখিয়েছিলাম যে, এ ধরনের গাড়ি বানাতে পারি এবং এ ধরনের প্রযুক্তি আমরা যুক্ত করতে পারি। কিন্তু এখন সেই প্রযুক্তির চেয়েও আমরা আরও এগিয়ে গেছি। এখন দেখাতে চাই, মোবিলিটি অনেকদূর যেতে পারে।’
জেটসি বলেন, ‘আমরা মানুষকে দুটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস ফেরত দিতে চাই আর তা হচ্ছে সময় ও জায়গা। যাতে তারা তাদের ইচ্ছানুযায়ী সময় পার করতে পারে। তারা কাজ করতে পারে, চোখ বন্ধ করতে পারে, ভিডিও কনফারেন্স করতে পারে কিংবা ঘুমিয়েও যেতে পারে।’
গাড়ি ও প্রযুক্তি নির্মাতাপ্রতিষ্ঠানটি লাস ভেগাসে এসে গাড়ির ভবিষ্যৎ​ কেমন হতে পারে এবং কী কী সম্ভব হতে পারে—তা দেখাচ্ছে কিন্তু এই প্রযুক্তিনির্ভর গাড়ির জন্য গ্রাহক এখনো প্রস্তুত কি না, সেটির কোনো ধারণা নেই।
যেখানে গুগলও সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তির গাড়ি তৈরি করছে, সেখানে অন্যান্য গাড়ি নির্মাতাপ্রতিষ্ঠান এই ক্ষেত্রটিতে ধীরে ধীরে এগোচ্ছে। বেশির ভাগ গাড়ি নির্মাতাপ্রতিষ্ঠান এখন স্বয়ংক্রিয় উপায়ে গাড়ি পার্কিং ও দুর্ঘটনা প্রতিরোধী প্রযুক্তির দিকে নজর দিচ্ছে।
ফ্রান্সের গাড়ির যন্ত্রাংশ নির্মাতাপ্রতিষ্ঠান ভ্যালিওর ভাইস প্রেসিডেন্ট গুইলাম ডেভাউচিলি বলেন, ‘গ্রাহকেরা যেটা গ্রহণ করতে এখন প্রস্তুত আছে এবং যা কারিগরিভাবে করা সম্ভব, সেটা দিতে পারছি। পরিপূর্ণ স্বয়ংক্রিয় গাড়ির ভাবনাটি এখনো আতঙ্কের নাম। আমরা এখন গাড়ির বিভিন্ন ফাংশনে মানুষের আস্থা অর্জনে কাজ করছি। এ ধরনের ফাংশনগুলো অবশ্যই সহজ ও সাশ্রয়ী করতে হবে আমাদের।’R
সিইএসে সাংবাদিকদের ক্রুজফরইউ প্রযুক্তি সুবিধার ভক্সওয়াগেন পাসাট গাড়িতে লাস ভেগাসের রাস্তায় ঘুরিয়েছে ভ্যালিও। এই প্রযুক্তিতে গাড়ির স্টিয়ারিংকে অটো পাইলট মোডে রাখা যায়, যাতে স্বয়ংক্রিয় উপায়ে গাড়ির গতি বাড়ানো, ব্রেক কষা ও দুর্ঘটনা এড়ানোর মতো বিভিন্ন বিষয় রয়েছে।
ভযালিও কর্মকর্তারা বলছেন, স্বয়ংক্রিয় গাড়ির এই প্রযুক্তি ২০১৭ সাল নাগাদ গাড়িতে বাণিজ্যিকভাবে যুক্ত হবে। কিন্তু গাড়ি সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় হতে এই প্রযুক্তির আরও কয়েক প্রজন্ম লেগে যেতে পারে। কারণ আরও জটিল পরিস্থিতিতে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে গাড়ি নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি উন্নত হতে হবে।
গাড়ি নির্মাতা অডি তাদের প্রটোটাইপ গাড়িটি যুক্তরাষ্ট্রের ৫৫০ মাইল রাস্তায় চালিয়ে দেখছে।
অডি আমেরিকার হাইওয়ে পাইলট প্রকল্পের পরিচালক ড্যানিয়েল লিপনিস্কিও স্বয়ংক্রিয় গাড়ির ক্ষেত্রে দ্রুত অগ্রসর হতে সতর্ক থাকার কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘স্বয়ংক্রিয় গাড়িগুলোতে একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, যাতে চালক যথাসময়ে ঠিকভাবে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেন।’
এদিকে গাড়ি নির্মাতা ফোর্ড তাদের আধা-স্বয়ংক্রিয় গাড়িগুলোর প্রচারে ব্যস্ত। তাদের গাড়িগুলোতে নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে প্রযুক্তির সহায়তা নিতে পারেন চালক।
ফোর্ডের প্রধান কারিগরি কর্মকর্তা রাজ নায়ার বলেন, ‘আমরা আধা-স্বয়ংক্রিয় গাড়ি তৈরি ও বাজারে ছাড়তে প্রস্তুত, যাতে বিভিন্ন সফটওয়্যার ও সেন্সর ব্যবহৃত হয়েছে। এতে জরুরি ব্রেক, গাড়ির গতি সমন্বয় কিংবা পার্কিংয়ের সুবিধা পাওয়া যায়।
স্বয়ংক্রিয় গাড়ির আরেকটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে—সংযোগ সুবিধা। কিছু গাড়িতে শুধু স্মার্টফোন, ট্যাব আর ইন্টারনেটই নয়, বরং স্মার্টওয়াচ ও পরিধেয় প্রযুক্তিপণ্যও সমর্থন করে।
দক্ষিণ কোরিয়ার হুন্দাই অ্যান্ড্রয়েড ওয়্যার চালিত স্মার্টওয়াচ উন্মুক্ত করেছে, যার সাহায্যে গাড়ির ইঞ্জিন চালু করা ও বন্ধ করা যায়। এ ছাড়া গাড়ির দরজার তালা মারা বা খোলা, গাড়ির অবস্থান নির্ণয় করা যায়।
এ ছাড়া বিএমডব্লিউ একটি সিস্টেম দেখিয়েছে, যাতে টিভি দিয়ে গাড়ির দরজা বন্ধ করে দেওয়া যায়। ডায়েটার জেটসি বলেন, গাড়ির ক্ষেত্রে এই উদ্ভাবনগুলো স্বয়ংক্রিয় গাড়ি তৈরির ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র প্রয়াসের উদাহরণ মাত্র। আগামী দশক নাগাদ সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় গাড়ি চলবে রাস্তায়, যাতে চালকের কোনো দরকারই হবে না।
-

Latest

Popular Posts

Popular Posts

Popular Posts