Business News - চার প্রতিষ্ঠানের বিশ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব অনাদায়ী মামলা করেছে এনবিআর






গ্যাস বিতরণকারী চারটি কোম্পানি গ্রাহকের কাছ থেকে আদায় করা বিশাল পরিমাণ রাজস্ব সরকারি কোষাগারে জমা না দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। ৫ বছরে গ্রাহকের কাছ থেকে আদায় করা সম্পূরক শুল্ক ও মূল্য সংযোজন করের (ভ্যাট) ১৩ হাজার ১৯৬ কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেয়নি এসব প্রতিষ্ঠান। এর সাথে সুদ যুক্ত হওয়ার পর এ অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ৬শকোটি টাকা! বিশাল পরিমাণ এ রাজস্ব পরিশোধ না করার অভিযোগে ইতিমধ্যে তিতাস, বাখরাবাদ, জালালাবাদ ও কর্ণফুলী গ্যাস বিতরণ কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। একক কোন খাতের বিরুদ্ধে এযাবতকালের সর্ববৃহত্ রাজস্ব অনিয়ম উদঘাটনের পর চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
এনবিআর সূত্র জানিয়েছে, রাজস্ব পরিশোধ না করার এ ইস্যুটিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ইতিমধ্যে এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে এ অর্থ পরিশোধের জন্য একটি আধা সরকারি (ডিও) পত্র দিয়েছেন। অবশ্য অভিযুক্ত কোম্পানিগুলো বলছে, সম্পূরক শুল্ক ও ভ্যাট বিতরণকারী কোম্পানিগুলোকে অব্যাহতি দেয়া আছে। এই অর্থ এসব কোম্পানির উপর আরোপ যৌক্তিক নয়। তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির পরিচালক (অর্থ) শংকর কুমার দাস ইত্তেফাককে বলেন, আমরা (গ্যাস বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো) সম্পূরক শুল্ক ও ভ্যাট আকারে কোন অর্থ প্রদান করি না। এটি গ্যাস উত্তোলনকারী কোম্পানিগুলো পরিশোধ করার কথা। আইওসির (আন্তর্জাতিক কোম্পানি) কাছ থেকে কেনা গ্যাস বিতরণের ক্ষেত্রে এ ধরনের করের ক্ষেত্রে এনবিআরের অব্যাহতি রয়েছে।
অবশ্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ইত্তেফাককে বলেন, গ্যাস বিতরণকারী কোম্পানিগুলোর এমন বক্তব্যের ভিত্তি নেই। তারা যেহেতু গ্রাহকের কাছ থেকে অর্থ আদায় করেন, সেজন্য ওই অর্থ সরকারি কোষাগারে পরিশোধের দায়িত্ব তাদেরই। সেই হিসেবে তারা শিল্পে বিতরণ থেকে পাওয়া ভ্যাট পরিশোধও করছে। সুতরাং অন্যান্য খাতের গ্রাহকের কাছ থেকে আদায় করা অর্থ কেন পরিশোধ হবে না?
সূত্র জানায়, অভিযুক্ত চার প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অনিয়মের অভিযোগ তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির বিরুদ্ধে। সম্পূরক শুল্ক ও ভ্যাটসহ এ কোম্পানি পরিশোধ করেনি ১০ হাজার ৯০৮ কোটি টাকার রাজস্ব। কর্ণফুলী ১ হাজার ২৬৮ কোটি, বাখরাবাদ ৬৭২ কোটি ও জালালাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির বিরুদ্ধে ৩৪৮ কোটি টাকা পরিশোধ না করার অভিযোগ রয়েছে। ২০০৯ সালের জুলাই থেকে গত বছরের মার্চ পর্যন্ত এ ৫ বছরের অর্থ অপরিশোধিত রয়েছে। বিদ্যমান ভ্যাট আইন অনুযায়ী, অনাদায়ী অর্থের জন্য প্রতি মাসে ২ শতাংশ হারে সুদও আদায়যোগ্য। সেই হিসেবে চার কোম্পানিকে সুদ হিসেবে পরিশোধ করতে হবে আরো ৬ হাজার ৩১৮ কোটি টাকা। 
এনবিআর সূত্র আরো জানায়, আইওসির কাছ থেকে কেনা গ্যাস বিতরণকালে সম্পূরক শুল্ক ও ভ্যাট আদায়ের বিধান রয়েছে। শিল্প খাত, বিদ্যুত্, সার, সিএনজি, ক্যাপটিভ পাওয়ার, চা বাগান এবং বাণিজ্যিক ও গৃহস্থালির গ্রাহকের কাছ থেকে গ্যাস বিলের সঙ্গে সম্পূরক শুল্ক ও ভ্যাট আদায় করে বিতরণকারী কোম্পানিগুলো। কিন্তু ২০০৯ সালের মার্চ থেকে গত বছরের মার্চ পর্যন্ত ৫ বছরে কেবলমাত্র শিল্প খাত থেকে আদায়কৃত ভ্যাটের অর্থই সরকারের কোষাগারে জমা দেয়া হয়েছে। এর বাইরে অন্যান্য খাতের গ্রাহকের কাছ থেকে আদায় করা শুল্ক ও ভ্যাট জমা দেয়নি। পরবর্তীতে এনবিআরের বৃহত্ করদাতা ইউনিট অভিযুক্ত এসব প্রতিষ্ঠানের কাছে তথ্য চায়। প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রেরিত তথ্য যাচাই-বাছাই করে এ বিপুল পরিমাণ রাজস্ব অনিয়মের তথ্য বের হয়। ওই তথ্যের ভিত্তিতে বৃহত্ করদাতা ইউনিট এনবিআরের কাছে করণীয় জানতে চাইলে এনবিআর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেয়। এর ভিত্তিতে কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে অভ্যন্তরীণ মামলা দায়ের করে এলটিইউ।
এনবিআর মনে করছে, গ্রাহকের কাছ থেকে সম্পূরক শুল্ক ও ভ্যাট আদায় করে তা সরকারি কোষাগারে জমা না দেয়া বেআইনি। এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সমপ্রতি এসব কোম্পানির প্রতিনিধিদের সাথে এ বিষয়ে সভাও হয়েছে।
বিশাল অঙ্কের এ রাজস্ব ফাঁকির তথ্য উদ্ঘাটনের পর এনবিআরের ভ্যাট কর্মকর্তাদের মধ্যে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। মামলার পর এখন প্রতিষ্ঠানগুলো শুনানিতে অংশ নেবে। শুনানি শেষে ভ্যাট আইনের বিদ্যমান ধারা অনুযায়ী, তাদের উপর চূড়ান্ত দাবিনামা জারি করবে এনবিআর।
-

Latest

Popular Posts

Popular Posts

Popular Posts