ঘরের
ডাইনিং-এর একঘেঁয়েমি কাটানোর জন্য পরিবারের সকলে বাইরের ভোজনঘরের আশ্রয়
নেয় নাকি! কিন্তু এখন নাকি সেই টাকার বিনিময়ে উদরপূর্তির জায়গাগুলোতেই
দরকার বৈচিত্র্য। কিন্তু বৈচিত্রের প্লট বদলে যখন অদ্ভুত আর্কিটেক্ট হয়ে
যায় তখন..?
সেখানে
প্রতিটি খাবারের আইটেমে রয়েছে বিশেষত্ব। বিশেষ করে হার্টের আকৃতির বিশেষ
এক ধরনের চকলেট রয়েছে, যা গ্রাহকদের বিশেষভাবে আকৃষ্ট করে। মালিক রেমো দি
ক্লডিও নিজেই গ্রাহকদের অভ্যর্থনা জানান ও সেবা দিয়ে থাকেন।
অদ্ভুত গুহা রেস্টুরেন্ট
অদ্ভুত
রেস্টুরেন্টের মাঝে গুহা রেস্টুরেন্টের ধারণাটি বেশ জনপ্রিয় আফ্রিকায়।
আফ্রিকার দক্ষিণ ‘মোম্বাসার ডায়ানি’ সমুদ্র সৈকতে এই রেস্টুরেন্টটি
অবস্থিত। পাঁচ লক্ষাধিক বছর আগেকার একটি গুহায় এই রেস্টুরেন্টটি নির্মাণ
করা হয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। বিস্ময়কর তথ্য হলো প্রাকৃতিকভাবে
সম্পূর্ণ গুহাটি হরেক রঙের প্রবাল ও চুনাপাথরের দ্বারা মোম্বাসা ডায়ানি
সমুদ্র সৈকতে লক্ষাধিক বছর টিকে রয়েছে। পরবর্তীতে অবশ্য সাগরের ঢেউয়ের
আঘাতে এর আকার-আকৃতি অনেকটা পরিবর্তিত হয়েছে। তবে এখানে অদ্ভুত গুহা
রেস্টুরেন্টটি নির্মাণ করতে, ব্যবহার উপযোগী করতে সংশ্লিষ্ট ভূমির মালিক
জর্জ বারবোরোরও কিছু ভূমিকা রয়েছে। গুহা রেস্টুরেন্টের খাবারের তালিকা আগে
থেকে ঠিক করা থাকে না! এই বিশেষত্বের কারণ আপনি যা খেতে চাইবেন সেটার
তালিকা বরং আপনাকেই দিয়ে রাখতে হবে রেস্টুরেন্টের কর্তৃপক্ষকে। এই আজব
রেস্টুরেন্টটির পরিবেশ এতটাই গুমোট যে, এখানে গরম খাবারের পরিবর্তে ঠাণ্ডা
খাবারের জনপ্রিয়তাই বেশি। তবে গুহা রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে আসার সময়
আপনাকে ধরিয়ে দেয়া হবে আপনার খাদ্যের বিল পেপার, যেটা দেখে আপনার মাথা ঘুরে
যেতে পারে। কারণ অদ্ভুত এই রেস্টুরেন্টের খাবারের মূল্যও অদ্ভুত এবং বেশিই
বটে। কেননা এর পরিচালনা খরচ একটু বেশিই বৈকি বিধায় এই ব্যাপারটি নিয়ে অনেক
পর্যটকই অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। রেস্টুরেন্টটির আরেকটি দিক উল্লেখ না
করলেই নয়। যারাই এখানে আসেন তাদের আগে থেকেই দেয়া হয় বিশেষ প্রশিক্ষণ। এই
প্রশিক্ষণ নাকি নিরাপত্তার জন্যে! প্রশিক্ষণে টিকতে না পারলে মিলবে না
এখানে ডিনারের অনুমতি।
অদ্ভুত
এই গুহা রেস্টুরেন্টে অনেকেই খেতে আসেন এই অদ্ভুত অনুভূতির জন্য। মনে হবে
যেন ফিরে গেছেন সেই প্রাচীন আমলে। গুহার ভিতরের গুমোট পরিবেশের সঙ্গে
ক্যান্ডেল ডিনারের জন্য এরইমধ্যে বেশ বিখ্যাত হয়েছে এই গুহা রেস্টুরেন্ট।
লবণের তৈরি রেস্টুরেন্ট!
ভোজনের
পাশাপাশি নান্দনিকতা আনতে ইরানে তৈরি হয়েছে অদ্ভুত এক ফাস্টফুড
রেস্টুরেন্ট। যার সবকিছু তৈরি লবণ দিয়ে। মনোমুগ্ধকর এই স্থাপনাটির রয়েছে
পরিবেশবান্ধব গুণাগুণ। তরুণ প্রজন্মের মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে এই
রেস্টুরেন্টটি। লবণ দিয়ে তৈরি গুহার নাম দেয়া হয়েছে ‘নামাক’। আসলে এটি একটি
রেস্টুরেন্ট। যার পুরো অবয়ব তৈরি হয়েছে লবণ দিয়ে। চেয়ার টেবিল থেকে শুরু
করে আনুষাঙ্গিক প্রায় সবকিছুতেই লবণের আধিক্য। ইরানের দক্ষিণাঞ্চলের সিরাজ
শহরে এই অদ্ভুত রেস্টুরেন্ট এরই মধ্যে স্থানীয়দের মাঝে ব্যাপক সাড়া
ফেলেছে।
স্থপতি
আলিরেজা ইমতিয়াজ বলেন, ‘আমরা আসলে পরিবেশ বান্ধব কিছু তৈরি করতে
চেয়েছিলাম। প্রথমে নানা প্রকারের লবণ নিয়ে কাজ করেছিলাম। পরে এই এলাকারই
একটি হূদে এমন লবণের সন্ধান পাই, যা আদ্রতাও ধরে রাখছে এবং ভঙ্গুর নয়।’
পরিবেশ বান্ধব এই রেস্টুরেন্টের সবকিছুতেই রয়েছে স্পষ্ট পারস্যের ছাপ।
টয়লেট সামগ্রী দিয়ে রেস্টুরেন্ট
জীবনে
অনেক ধরণের রেস্টুরেন্ট দেখেছেন কিন্তু টয়লেট সামগ্রী দিয়ে তৈরি
রেস্টুরেন্ট দেখেছেন কি? হ্যাঁ, টয়লেট সামগ্রী দিয়ে তৈরি রেস্টুরেন্ট!
তাইওয়ানের ‘মডার্ন টয়লেট’ নামের একটি রেস্টুরেন্ট তার সমস্ত আসবাবপত্র থেকে
শুরু করে খাবারের মেন্যুতে টয়লেট সামগ্রীর কথা মাথায় রেখে কাজ করছে।
রেস্টুরেন্টের
ঘটি-বাটি থেকে শুরু করে চেয়ার-টেবিল সবকিছু টয়লেট সামগ্রীর মতো ব্যবহার
করা হচ্ছে। অদ্ভুত এ রেস্টুরেন্টটিতে খাবার পরিবেশনের জন্য আপনাকে কমোড
আকৃতির বাটি পর্যন্ত সরবরাহ করা হবে। এছাড়া এর ভেতরকার সব চেয়ারগুলোও
কমোডের আদলে বানানো হয়েছে। বিচিত্র এ রেস্টুরেন্টটিতে যেসব খাবার দেয়া হয়
সেগুলোর বেশিরভাগই রঙ ও আকৃতিতে অনেকটাই মানুষের স্তূপীকৃত মলের মতো দেখতে।
দেখতে যেমনই হোক, অদ্ভুত এ রেস্টুরেন্টে বসে খাবারগুলোর স্বাদ উপভোগের
জন্য প্রতিদিন ভোজন রসিকদের ভিড় লেগেই থাকে! আর সে কারণেই ‘মডার্ন টয়লেট’
রেস্টুরেন্টের শাখা এখন তাইওয়ান থেকে হংকংয়েও বিস্তার লাভ করেছে।
বানর যখন ওয়েটার
রেস্টুরেন্টে
গেছেন খাবার খেতে। সেখানে গিয়ে দেখলেন সেখানকার ওয়েটার এক বানর। সে
পরিবেশন করছে খাবার! ভাবলেই খাবার খাবেন না দৌড় দেবেন? হ্যাঁ এমন ঘটনা
ঘটেছে জাপানের একটি রেস্টুরেন্টে। তারা মানুষের পরিবর্তে বানরকে নিজেদের
রেস্টুরেন্টের ওয়েটার হিসেবে নিয়োগ দিচ্ছে। তবে রেস্টুরেন্টে আগত গ্রাহকরা
যেন ভড়কে না যান সেজন্য বানরগুলোর মুখে মানুষের মুখের আদলে মুখোশ পরানো হয়।
অদ্ভুত কিন্তু সত্য! জাপানের টোকিওর উত্তরে উতসোনোমিয়ার মিওকিহোনচোর
কায়াবুকিতে এই রেস্টুরেন্টটি অবস্থিত। যেকোনো গ্রাহক এ রেস্টুরেন্টে এসে
খাবার টেবিলে বসলেই চমকে যাবেন। কারণ কিছুক্ষণ পরেই খাবারের অর্ডার নিতে
আসবে দুটি বানর, যাদের একটির নাম ইয়াত চ্যান, অন্যটির নাম ফুকু চ্যান। এর
মাঝে ইয়াত চ্যানের বয়স ১৬ বছর ও সে ফুকুর চেয়ে বড়। ইয়াত নামের বানরটি বেশ
দ্রুত গতিতে রেস্টুরেন্টে আসা অতিথিদের দেয়া পানীয়ের অর্ডার সংগ্রহ করে। আর
ফুকু চ্যানের কাজ হচ্ছে খাবারের আগে গ্রাহকদেরকে গরম তোয়ালে সরবরাহ করা ও
হাত ধোয়ার সময় তাদেরকে সহযোগিতা করা। এটা জাপানি রীতি। আর বিশ্বাস করুণ আর
নাই করুণ, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বানর দুটিকে কাজ করার অনুমতিপত্রও প্রদান
করেছেন। আর রেস্টুরেন্টে আসা মানুষরা এ বানর দুটিকে খুব পছন্দ করেন। টিপ
হিসেবে এদেরকে দেয়া হয় সয়াবিন। রেস্টুরেন্টের একজন নিয়মিত গ্রাহক তাকাইয়োশি
সোয়েনো বলেন, ‘অনেক বাজে মানুষের চেয়ে এই বানরগুলোই ভালো এবং তারা ওয়েটার
হিসেবেও দক্ষ।’
বানর
দুটির মালিক কাওরু ওত্সুকা। তিনি নিজের বাড়িতে বানর দুটি পুষতেন। কাওরু
দেখলেন ইয়াত চ্যান নামের বানরটি রেস্টুরেন্টের বিভিন্ন কাজ খুব মনোযোগ দিয়ে
খেয়াল করছে ও কিছু কিছু কাজ নিজেই করছে। তখন কাওরু বুঝলেন বানরটি আসলেই
রেস্টুরেন্টে কাজ করতে সক্ষম। একদিন কাওরু ইয়াত চ্যানকে একটি তোয়ালে দিয়ে
দেখলেন সে সেটা গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দিতে পারে কি-না। বলাই বাহুল্য, ইয়াত
চ্যান সে কাজটি বেশ ভালোভাবেই সম্পন্ন করে। অনেক গ্রাহকের কাছেই এই বানর
দুটি একদম শিশুদের মতোই, তারা এদেরকে পছন্দ করে।
৬২
বছর বয়স্ক শিওচি ইয়ানো বলেন, ‘মানুষের চেয়ে এই বানর দুটি ভালো। আমার ছেলে
আমার কথা শোনে না, কিন্তু এ বানরগুলো শোনে। শুধু তাই নয়, রেস্টুরেন্টে আসা
গ্রাহকরা যে পানীয়ের অর্ডারই দেন, ইয়াত চ্যান সেটা ঠিকভাবে মনে রাখতে পারে ও
সে অনুযায়ী সেটা যার যার টেবিলে পৌঁছে দেয়।’
জাপানের
প্রাণী অধিকার সংরক্ষণ আইনের অধীনে এই বানরগুলোকে দিনে মাত্র দুই ঘণ্টা
কাজ করার অনুমতি দেয়া হয়েছে। কিন্তু কাওরু এরইমধ্যে আরও বানর ওয়েটার নিয়ে
আসার পরিকল্পনা করছেন ও তিনটি বানরকে এ কাজের জন্য তৈরি করে তুলছেন।
সবচেয়ে ছোট রেস্টুরেন্ট!
জনপ্রিয়
রেস্টুরেন্টগুলোতে গিয়ে ওয়েটারদের আচরণে অনেকে বিরক্ত হন। গ্রাহকদের ভিড়
থাকায় অনেক রেস্টুরেন্টে সঠিক সময়ে সার্ভিস পাওয়া যায় না। গ্রাহকদের এসব
বিড়ম্বনা থেকে মুক্তি দিতে ইতালিতে ভিন্নধারার একটি রেস্টুরেন্ট খোলা
হয়েছে। রেস্টুরেন্টে শত চেষ্টা সত্ত্বেও একই সময়ে দু’জনের বেশি গ্রাহক সেবা
নিতে পারবেন না। বলা চলে রেস্টুরেন্টটি শুধু দু’জনার। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে
ছোট হোটেল।
ইতালির
বেকনে অবস্থিত হোটেলটির নাম স্থানীয় ভাষায় ‘সলো পার দো’। এতে খাবার খেতে
হলে আগে থেকেই বুকিং দিয়ে রাখতে হয়। এতে একটি টেবিল ও দুটি চেয়ারের
ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সুতরাং একই সময়ে দু’জনের বেশি গ্রাহকের খাওয়া-দাওয়া
করা সম্ভব নয়। সেখানে যেতে হলে আগে থেকেই ই-মেইল করে ও ফি দিয়ে বুকিং দিয়ে
রাখতে হয়। রেস্টুরেন্টটি আলাদা বৈশিষ্ট্য মণ্ডিত।