Media news - পিন্টোর দ্রোণাচার্য বাংলাদেশের আকরাম!

ফ্রিদা পিন্টো ও আকরাম খানশিল্পীরা পাখির মতন। তাদের খাঁচায় পুরতে নেই। পায়ে শিকল বাঁধতে নেই। কিন্তু রাষ্ট্রযন্ত্র নিষেধাজ্ঞার খাঁচা বানায়। নিয়মের শিকল পরায়। শিল্পীকে পোষ মানাতে চায়। কিন্তু সব শিল্পীই কি আর পোষ মানেন? শিল্পীর মনের ভেতরে বাস করে এক বিদ্রোহী সত্তা। রাষ্ট্রকে, রাষ্ট্রের শৃঙ্খলাবদ্ধ নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখায়। শাস্তি কিংবা নির্বাসনের কোনো ভয়ডর তাঁর নেই।
আফশিন গাফফারিয়ান এমনই একটা পাখি। একজন শিল্পী। একজন বিদ্রোহী। ইরানে তখন নাচ সর্বৈব নিষিদ্ধ। নৃত্যকলাকে পরানো হয়েছে শিকল। নাচলেই শাস্তি। চাবুকের আঘাত। কিন্তু গাফফারিয়ানের মনের ভেতরেই যে নাচের সুর। ছন্দ। তাল-লয়। সেই সুর আপনা থেকেই বেরিয়ে আসে। শাস্তির তোয়াক্কা না করেই গাফফারিয়ান গড়ে তোলেন নাচের দল।
রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এ-ও একরকম বিদ্রোহ। সব বিদ্রোহ ঘোষণায় অস্ত্র লাগে না। শিল্পীর অস্ত্র তো তাঁর শিল্পই। সেই অস্ত্র দিয়েই রাষ্ট্রের মুরব্বিগিরির বিরুদ্ধে প্রতিবাদী জবাব দেন গাফফারিয়ান। এ সময় তাঁর পাশে এসে দাঁড়ান এক নারী। এলাহই।
এমনই গল্প দিয়ে, সত্যিকারের ঘটনা অবলম্বনে বানানো হয়েছে ডেজার্ট ড্যান্সার। ১০ এপ্রিল মুক্তির অপেক্ষায় থাকা রিচার্ড রেমন্ডের পরিচালনায় এই ছবিতে এলাহই চরিত্রে অভিনয় করেছেন ফ্রিদা পিন্টো। কোথাও না কোথাও এলাহই চরিত্রটির সঙ্গে তিনি নিজের মিল খুঁজে পান। নাচ মিশে আছে তাঁরও রক্তে। শৈশবেই ভারতীয় ধ্রুপদি নাচের তালিম নিয়েছেন। কোথা থেকে সুর ভেসে এলে আনমনেই নেচে ওঠে তাঁর মনের ভেতরটা।
কিন্তু ভারতীয় নয়, এই ছবিতে পিন্টো যে অভিনয় করেছেন একজন ইরানি তরুণীর। নাচের ধরনটাও সেখানে আলাদা। গাফফারিয়ানের নাচের গুরু ছিলেন মাইকেল জ্যাকসন। না, প্রয়াত পপ কিংবদন্তি সরাসরি তাঁকে নাচের তালিম দেননি। জ্যাকসন এখানে দ্রোণাচার্য, গাফফারিয়ান যেন একলব্য। ভিডিওতে জ্যাকসনের নাচ দেখে দেখে শিখেছেন।
ফলে গাফফারিয়ানের নাচের ভঙ্গিতে পাশ্চাত্যের সঙ্গে ইরানের সুর মিশেছে। এলাহই চরিত্রটি করতে গিয়ে সেই নাচ শিখতে হয়েছে পিন্টোকে। কী হাড়ভাঙা খাটুনিটাই না খেটেছেন। টানা ১৪ সপ্তাহ দিনে আট ঘণ্টার তালিম! পিন্টোর দ্রোণাচার্য হয়ে আসেন আকরাম খান। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নৃত্যশিল্পী।
আকরামের প্রতি কৃজ্ঞতার শেষ নেই পিন্টোর। প্রথমে ছবিটার প্রস্তাব পাওয়ার পর ভেবেছিলেন, তাঁকে দিয়ে হবে না। কিন্তু আকরামই তাঁর মনে সেই বিশ্বাসের বীজটা পুঁতে দেন—সম্ভব! ‘রিচার্ডের সঙ্গে আমার নভেম্বরে কথা, আর মার্চেই সে শুটিং শুরু করে দিতে চাইল। আমি আঁতকে উঠে বললাম, মার্চের মধ্যে আমাকে দিয়ে কোনোভাবেই সম্ভব নয়,’ এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন পিন্টো।
সেই অস্বস্তির খচখচানির মধ্যে স্বস্তি হয়ে আসেন আকরাম। পিন্টো বলেন, ‘আমি আকরামকে এই ছবি করার আগে থেকেই জানতাম, আমরা দুজনই এশিয়ার, একই শিকড় আমাদের। যখন জানলাম আকরামও আমাদের সঙ্গে কাজ করবে, তখনই বুঝে গিয়েছিলাম, এটা অন্য মাত্রা পেতে যাচ্ছে।’
আকরামের সঙ্গে অনুশীলনে ব্যালের পাশাপাশি আধুনিক ঘরানার নাচও শিখেছেন। কঠোর অনুশীলন। সেই অনুশীলনটাই পিন্টোকে শারীরিক আর মানসিকভাবে শক্তিশালী করে তুলেছে বলে বললেন, ‘শারীরিকভাবে আমি অবশ্যই আগের চেয়ে শক্তিশালী হয়ে উঠেছি, একই সঙ্গে আমি আবিষ্কার করেছি, নাচ আমাকে আবেগের দিক দিয়েও শক্তিশালী করেছে। তাই এটা আমার কাছে একটা ছবির জন্য প্রশিক্ষণের চেয়েও বেশি কিছু। এটা আমার কাছে জীবনের জন্যই প্রশিক্ষণ।’
-

Latest

Popular Posts

Popular Posts

Popular Posts