‘কেউ
যখন আমার দিকে তাকায়, মনে হয় সে আমাকে দেখছে না। আমার ভেতর অন্য কাউকে
খুঁজছে। তারা আসলে আমাকে নয়, আমার ভেতরের তারকাকে খোঁজে। কিন্তু আমার তো
সেই তারকাদ্যুতি নেই। তাই তাদের সেই চাহনির সঙ্গে এখনো আমি অভ্যস্ত হতে
পারিনি,’ বললেন নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি। সবাই এখন তাঁকে একনজর দেখলেই চিনে
ফেলে। ভিড় জমায় তাঁর আশপাশে। এমন হওয়াটাই স্বাভাবিক। কারণ, এই অভিনেতার সফল
ছবির আনুপাতিক হার এখনো অনেক বলিউড তারকা অভিনেতার চেয়ে বেশি।
গতানুগতিক বলিউড মসলা ছবিতে খুব কমই অভিনয় করেছেন, তবে নিজের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়ে এ অভিনেতা বলিউডে শুরু করেছেন নতুন ধারা। নিশ্চয়ই নতুন করে গ্যাংস অব ওয়াসিপুর কিংবা লাঞ্চবক্স-এর কথা উল্লেখ করার প্রয়োজন নেই। নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি তাঁর খুব অল্প কয়েকটি ছবি দিয়েই বলিউডে গেড়েছেন শক্ত খুঁটি, যা ৮ থেকে ১০টা শতকোটি রুপি আয় করা ছবির নায়কেরাও করতে পারেন না। মোটকথা, দিন যত যাচ্ছে নওয়াজউদ্দিন বলিউডে লগ্নিকারীদের কাছে হয়ে উঠছেন ততই আস্থাশীল। তবে এই লগ্নিকারীরা কিন্তু বলিউডের নাচ-গানওয়ালা ছবির জন্য অর্থ ঢালে না। এরা অর্থ ঢালে ‘নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি’ ঘরানার ছবির জন্যই। যা ঘরে শতকোটি রুপি এনে না দিলেও, ঝুলিভরা সম্মাননা, স্বীকৃতি আর জগৎজোড়া প্রশংসা এনে দেবে নিশ্চিত।
আমির খান অভিনীত সারফারোস ছবির খুব ছোট একটা চরিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে ক্যামেরার সামনে প্রথম দাঁড়ান নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি। তখনো অভিনেতা হওয়ার স্বপ্নটা তাঁর কাছে অধরাই মনে হতো। সেই অধরা স্বপ্নের পেছনে ছুটতে ছুটতেই ২০০০ সালে মুম্বাই আসেন নওয়াজউদ্দিন। কখনো এই পরিচালকের অফিসে তো কখনো ওই প্রোডাকশন হাউসে ধরনা দিতে শুরু করেন। ঘুরতে ঘুরতে একটা সময় ভাগ্য আর মেধার জোরে রাজকুমার হিরানীর মুন্নাভাই এমবিবিএস ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পেয়ে যান। কিন্তু আবারও সেই ছোট চরিত্র। মাত্র মিনিট দেড়েকের জন্য। পকেটমার। মুন্নাভাইয়ের বাবার (সুনীল দত্ত) পকেট কাটেন তিনি। সবাই যখন তাঁকে ধরে গণপিটুনি দেবে, তখনই এসে নওয়াজউদ্দিনকে উদ্ধার করবেন সুনীল দত্ত। এই ছিল চরিত্র। ব্যস। শেষ হলো মুন্নাভাই এমবিবিএস ছবির কাজও। এরপর আবারও কাজের খোঁজে দ্বারে দ্বারে ঘোরা।
এমন ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ একদিন দেখা হয়ে গেল পাগলাটে পরিচালক অনুরাগ কাশ্যপের সঙ্গে। যাঁর ভাবনাগুলো অনেকটাই মিলে যায় নওয়াজউদ্দিনের সঙ্গে। ব্যাটে-বলে মিলে গেল। শুরু হলো নওয়াজউদ্দিনের ভাগ্যরেখা বদলে দেওয়া ছবি গ্যাংস অব ওয়াসিপুর-এর কাজ। ২০১২ সালে মুক্তি পেল ছবিটি। ওই বছরই পুরো ছবির দলের সঙ্গে নওয়াজউদ্দিনের ডাক এল কান চলচ্চিত্র উৎসব থেকে। কিন্তু নওয়াজউদ্দিনের তো তখনো নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। তাঁর ভাষায়, সেই আসরের জন্য একটা ডিজাইনার স্যুট জোগাড় করতে কয়েক দিন হাড়ভাঙা খাটুনি খাটতে হয়েছিল তাঁকে। এখন দিন বদলেছে। এখন নওয়াজউদ্দিন ঘোরেন কালো কাচে ঢাকা গাড়িতে করে। তাঁর সঙ্গে সারাক্ষণ থাকেন তাঁর ম্যানেজার, পাবলিসিস্ট আর সহকারী। এখন সেই অধরা স্বপ্নটাই বাস্তব হয়ে গেছে নওয়াজউদ্দিনের কাছে। তবে মজার বিষয় হলো, নওয়াজউদ্দিনের এই সাফল্য এখনো তাঁর পরিবারের কাছে একটা অভেদ্য রহস্যের মতো। নওয়াজউদ্দিন কী করেন না করেন, তাঁর পরিবার সেসব বুঝতেই পারে না! কী করে বুঝবে, ভারতের উত্তর প্রদেশের গরিব কৃষকের পরিবারে জন্ম নওয়াজউদ্দিনের। নয় ভাইবোনের সংসারে অনেক টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে বড় হয়েছেন। তাঁরা মা-বাবা সব ভাইবোনকে সুশিক্ষিত করতে পারেননি। নওয়াজউদ্দিন শুধু তাঁর পরিবারের মধ্যেই নন, তাঁর পুরো গ্রামের প্রথম গ্র্যাজুয়েট ব্যক্তি। এমনকি এখনো নওয়াজউদ্দিনের একটি ছবি দেখার জন্য তাঁর পরিবারকে পাড়ি দিতে হয় ২৫ মাইল পথ। এসব কান চলচ্চিত্র উৎসব, ইন্ডি সিনেমা, আর্ট ফিল্ম, লো বাজেট মুভির ব্যাখ্যা বোঝে না নওয়াজউদ্দিনের গ্রামের মানুষ। তাদের কাছে নওয়াজউদ্দিনের সেরা অভিনয় কিক ছবিতে সালমানকে সেই ঘুষি মারার দৃশ্যটাই! তাই নিজের আগ্রহ না থাকলেও পরিবার আর গ্রামের মানুষদের মন রক্ষার জন্য বছরে একটা-দুটো হলেও বলিউডের মসলা ছবি করতে চান নওয়াজউদ্দিন। তবে হলিউডে খুব একটা আগ্রহ নেই তাঁর। নিকোল কিডম্যানের সঙ্গে লায়ন নামে একটা ছবিতে কয়েকটা দৃশ্যে অভিনয় করেছেন। তাতেই খুশি। বললেন, ‘আমি নিজের দেশেই আন্তর্জাতিক মানের ছবিতে অভিনয় করছি। আমার আর বিদেশে যাওয়ার কী প্রয়োজন?’
গতানুগতিক বলিউড মসলা ছবিতে খুব কমই অভিনয় করেছেন, তবে নিজের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়ে এ অভিনেতা বলিউডে শুরু করেছেন নতুন ধারা। নিশ্চয়ই নতুন করে গ্যাংস অব ওয়াসিপুর কিংবা লাঞ্চবক্স-এর কথা উল্লেখ করার প্রয়োজন নেই। নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি তাঁর খুব অল্প কয়েকটি ছবি দিয়েই বলিউডে গেড়েছেন শক্ত খুঁটি, যা ৮ থেকে ১০টা শতকোটি রুপি আয় করা ছবির নায়কেরাও করতে পারেন না। মোটকথা, দিন যত যাচ্ছে নওয়াজউদ্দিন বলিউডে লগ্নিকারীদের কাছে হয়ে উঠছেন ততই আস্থাশীল। তবে এই লগ্নিকারীরা কিন্তু বলিউডের নাচ-গানওয়ালা ছবির জন্য অর্থ ঢালে না। এরা অর্থ ঢালে ‘নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি’ ঘরানার ছবির জন্যই। যা ঘরে শতকোটি রুপি এনে না দিলেও, ঝুলিভরা সম্মাননা, স্বীকৃতি আর জগৎজোড়া প্রশংসা এনে দেবে নিশ্চিত।
আমির খান অভিনীত সারফারোস ছবির খুব ছোট একটা চরিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে ক্যামেরার সামনে প্রথম দাঁড়ান নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি। তখনো অভিনেতা হওয়ার স্বপ্নটা তাঁর কাছে অধরাই মনে হতো। সেই অধরা স্বপ্নের পেছনে ছুটতে ছুটতেই ২০০০ সালে মুম্বাই আসেন নওয়াজউদ্দিন। কখনো এই পরিচালকের অফিসে তো কখনো ওই প্রোডাকশন হাউসে ধরনা দিতে শুরু করেন। ঘুরতে ঘুরতে একটা সময় ভাগ্য আর মেধার জোরে রাজকুমার হিরানীর মুন্নাভাই এমবিবিএস ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পেয়ে যান। কিন্তু আবারও সেই ছোট চরিত্র। মাত্র মিনিট দেড়েকের জন্য। পকেটমার। মুন্নাভাইয়ের বাবার (সুনীল দত্ত) পকেট কাটেন তিনি। সবাই যখন তাঁকে ধরে গণপিটুনি দেবে, তখনই এসে নওয়াজউদ্দিনকে উদ্ধার করবেন সুনীল দত্ত। এই ছিল চরিত্র। ব্যস। শেষ হলো মুন্নাভাই এমবিবিএস ছবির কাজও। এরপর আবারও কাজের খোঁজে দ্বারে দ্বারে ঘোরা।
এমন ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ একদিন দেখা হয়ে গেল পাগলাটে পরিচালক অনুরাগ কাশ্যপের সঙ্গে। যাঁর ভাবনাগুলো অনেকটাই মিলে যায় নওয়াজউদ্দিনের সঙ্গে। ব্যাটে-বলে মিলে গেল। শুরু হলো নওয়াজউদ্দিনের ভাগ্যরেখা বদলে দেওয়া ছবি গ্যাংস অব ওয়াসিপুর-এর কাজ। ২০১২ সালে মুক্তি পেল ছবিটি। ওই বছরই পুরো ছবির দলের সঙ্গে নওয়াজউদ্দিনের ডাক এল কান চলচ্চিত্র উৎসব থেকে। কিন্তু নওয়াজউদ্দিনের তো তখনো নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। তাঁর ভাষায়, সেই আসরের জন্য একটা ডিজাইনার স্যুট জোগাড় করতে কয়েক দিন হাড়ভাঙা খাটুনি খাটতে হয়েছিল তাঁকে। এখন দিন বদলেছে। এখন নওয়াজউদ্দিন ঘোরেন কালো কাচে ঢাকা গাড়িতে করে। তাঁর সঙ্গে সারাক্ষণ থাকেন তাঁর ম্যানেজার, পাবলিসিস্ট আর সহকারী। এখন সেই অধরা স্বপ্নটাই বাস্তব হয়ে গেছে নওয়াজউদ্দিনের কাছে। তবে মজার বিষয় হলো, নওয়াজউদ্দিনের এই সাফল্য এখনো তাঁর পরিবারের কাছে একটা অভেদ্য রহস্যের মতো। নওয়াজউদ্দিন কী করেন না করেন, তাঁর পরিবার সেসব বুঝতেই পারে না! কী করে বুঝবে, ভারতের উত্তর প্রদেশের গরিব কৃষকের পরিবারে জন্ম নওয়াজউদ্দিনের। নয় ভাইবোনের সংসারে অনেক টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে বড় হয়েছেন। তাঁরা মা-বাবা সব ভাইবোনকে সুশিক্ষিত করতে পারেননি। নওয়াজউদ্দিন শুধু তাঁর পরিবারের মধ্যেই নন, তাঁর পুরো গ্রামের প্রথম গ্র্যাজুয়েট ব্যক্তি। এমনকি এখনো নওয়াজউদ্দিনের একটি ছবি দেখার জন্য তাঁর পরিবারকে পাড়ি দিতে হয় ২৫ মাইল পথ। এসব কান চলচ্চিত্র উৎসব, ইন্ডি সিনেমা, আর্ট ফিল্ম, লো বাজেট মুভির ব্যাখ্যা বোঝে না নওয়াজউদ্দিনের গ্রামের মানুষ। তাদের কাছে নওয়াজউদ্দিনের সেরা অভিনয় কিক ছবিতে সালমানকে সেই ঘুষি মারার দৃশ্যটাই! তাই নিজের আগ্রহ না থাকলেও পরিবার আর গ্রামের মানুষদের মন রক্ষার জন্য বছরে একটা-দুটো হলেও বলিউডের মসলা ছবি করতে চান নওয়াজউদ্দিন। তবে হলিউডে খুব একটা আগ্রহ নেই তাঁর। নিকোল কিডম্যানের সঙ্গে লায়ন নামে একটা ছবিতে কয়েকটা দৃশ্যে অভিনয় করেছেন। তাতেই খুশি। বললেন, ‘আমি নিজের দেশেই আন্তর্জাতিক মানের ছবিতে অভিনয় করছি। আমার আর বিদেশে যাওয়ার কী প্রয়োজন?’