National news - বেশি গরিব মানুষের বাস ঢাকা বিভাগে


বাংলাদেশের দারিদ্র্য মানচিত্র প্রকাশ
দেশে যত গরিব মানুষ আছে, তার এক-তৃতীয়াংশেরই বাস ঢাকা বিভাগে। আর সবচেয়ে কম দরিদ্র মানুষ থাকে সিলেট বিভাগে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস), বিশ্বব্যাংক এবং জাতিসংঘের খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) যৌথভাবে বাংলাদেশের দারিদ্র্য মানচিত্র প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, দেশের দরিদ্র মানুষের ৩২ দশমিক ৩ শতাংশই বাস করে ঢাকা বিভাগে। আর সিলেটে বাস করে মাত্র ৫ দশমিক ৭ শতাংশ দরিদ্র মানুষ। বেশি মানুষ বাস করে বলেই ঢাকা বিভাগে গরিব মানুষের সংখ্যাও বেশি।
অন্যদিকে জেলাওয়ারি হিসাবে কুষ্টিয়ায় দরিদ্র মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে কম, ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। আর সবচেয়ে বেশি কুড়িগ্রামে। এই জেলার ৬৩ দশমিক ৭ শতাংশ মানুষই গরিব।
রাজধানীর একটি হোটেলে গতকাল বুধবার এই দারিদ্র্য মানচিত্র প্রকাশ করা হয়।
খানা আয়-ব্যয় জরিপে উল্লিখিত দারিদ্র্য হারের সঙ্গে দারিদ্র্য মানচিত্রের তথ্যে কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। মানচিত্রটি প্রণয়ন করা হয়েছে খানা জরিপ ও আদমশুমারির পরিসংখ্যান সমন্বয় করে। খানা জরিপ অনুযায়ী, ২০১০ সালে দেশের দারিদ্র্য হার ছিল ৩১ দশমিক ৫ শতাংশ। আর মানচিত্র অনুযায়ী, এ হার ৩০ দশমিক ৭ শতাংশ। বিশ্বব্যাংক সূত্র বলছে, দারিদ্র্য হারের গরমিলের কারণ হলো, খানা জরিপ করা হয় কিছু নির্ধারিত খানা ধরে। আর আদমশুমারিতে দেশের প্রত্যেক মানুষকে গণনা করা হয়। দারিদ্র্য মানচিত্র প্রণয়নে খানা জরিপ থেকে গরিব মানুষের শুধু মৌলিক চাহিদার উপাত্তগুলো নেওয়া হয়েছে। দেশের মোট জনসংখ্যার সঙ্গে খানা জরিপের মৌলিক চাহিদার উপাত্তগুলো সমন্বয় করতে গিয়েই দারিদ্র্য হারে কিছুটা হেরফের হয়েছে। আদমশুমারি অনুযায়ী দেশের মোট জনসংখ্যাকে দারিদ্র্য হার দিয়ে ভাগ করলে গরিব মানুষের হিসাব পাওয়া যাবে। সে অনুযায়ী দেশে এখন দরিদ্র মানুষের সংখ্যা প্রায় পাঁচ কোটি।
দারিদ্র্য মানচিত্রের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংকের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন প্রথম আলোকে জানান, গরিব মানুষের হার কমাতে বাংলাদেশে দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচিকেই প্রাধান্য দিতে হবে। গরিব মানুষের আয় বাড়লে দারিদ্র্য হার কমবে। গরিব মানুষের আয় বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। আর গরিবের সংখ্যা কমে যাওয়ার পর আয়-বৈষম্য কমানোর নীতি-সহায়তা দিতে হবে। বর্তমানে রাষ্ট্র ধনী মানুষকে আরও ধনী হওয়ার নীতি-সহায়তা দিয়ে থাকে।
একই রকম মত দিয়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক বিনায়ক সেন বলেন, ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে কাজের সুযোগ অপেক্ষাকৃত বেশি। তাই সেখানে বেশি গরিব মানুষ ভিড় করে। যদি অন্য বিভাগগুলোতে বিনিয়োগ বাড়িয়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা যায়, তবে দারিদ্র্য হার কিছুটা দ্রুত গতিতে কমানো যেত। তাঁর মতে, দারিদ্র্য হার কমানোর প্রবণতা ত্বরান্বিত করতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। এ জন্য কৃষি, শ্রমঘন শিল্প ও সেবা খাতে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে হবে।
গতকাল প্রকাশিত দারিদ্র্য মানচিত্র অনুযায়ী, সার্বিকভাবে ঢাকা বিভাগের পর বেশি গরিব মানুষ বাস করে চট্টগ্রামে, ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ। এ ছাড়া রংপুর বিভাগে ১৫ শতাংশ, রাজশাহী বিভাগে ১১ দশমিক ৬ শতাংশ, খুলনা বিভাগে ১১ দশমিক ৪ শতাংশ এবং বরিশাল বিভাগে ৭ দশমিক ৩ শতাংশ।
কোনো বিভাগে বসবাসকারী মানুষের কত শতাংশ দরিদ্র, সে তথ্যেরও উল্লেখ রয়েছে মানচিত্রে। তাতে দেখা যাচ্ছে, রংপুর বিভাগে যত মানুষ বাস করে, তার ৪২ শতাংশই দরিদ্র। এরপর জনসংখ্যার দিক থেকে বেশি গরিব মানুষের বাস বরিশালে, ৩৮ দশমিক ৩ শতাংশ। এর বাইরে খুলনার মোট জনসংখ্যার ৩১ দশমিক ৯ শতাংশ, ঢাকার ৩০ দশমিক ৫ শতাংশ, রাজশাহীর ২৭ দশমিক ৪ শতাংশ, চট্টগ্রামের ২৬ দশমিক ১ শতাংশ এবং সিলেটের ২৫ দশমিক ১ শতাংশ মানুষ দরিদ্র।
জেলা পর্যায়ের দারিদ্র্য পরিস্থিতিও উঠে এসেছে মানচিত্রে। তাতে দেখা যাচ্ছে, ঢাকা বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দরিদ্র মানুষ বাস করে শরীয়তপুরে, ৫২ দশমিক ৬ শতাংশ আর কম ঢাকা জেলায়, ১৫ দশমিক ৭ শতাংশ। চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে দরিদ্র মানুষ বেশি চাঁদপুরে, ৫১ শতাংশ এবং কম নোয়াখালীতে, ৯ দশমিক ৬ শতাংশ। রাজশাহী বিভাগে বেশি দরিদ্র মানুষের বাস সিরাজগঞ্জে, ৩৮ দশমিক ৭ শতাংশ এবং কম বগুড়ায়, ১৬ দশমিক ৬ শতাংশ। রংপুর বিভাগে বেশি দরিদ্র কুড়িগ্রামে, ৬৩ দশমিক ৭ শতাংশ এবং কম পঞ্চগড়ে, ২৬ দশমিক ৭ শতাংশ। খুলনা বিভাগে বেশি দরিদ্র সাতক্ষীরায়, ৪৬ দশমিক ৩ শতাংশ এবং কম কুষ্টিয়ায়, ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। সিলেটে দারিদ্র্য বেশি সুনামগঞ্জে, ২৬ শতাংশ এবং কম সিলেট জেলায়, ২৪ দশমিক ১ শতাংশ। বরিশালে বেশি দরিদ্র মানুষের বাস বরিশাল জেলায়, ৫৪ দশমিক ৮ শতাংশ আর কম বরগুনায়, ১৯ শতাংশ।
আবার ঢাকা বিভাগের দরিদ্র মানুষের ৫৫ শতাংশের বেশি বাস করে ওই বিভাগের ১০টি দরিদ্রতম উপজেলায়। অন্যদিকে ধনী ১০টি উপজেলায় মোট মানুষের মাত্র ৪ শতাংশ দরিদ্র। একইভাবে চট্টগ্রামের দরিদ্র মানুষের অর্ধেকই বাস করে ওই বিভাগের ছয়টি দরিদ্রতম উপজেলায়। আর ছয়টি ধনী উপজেলায় চার শতাংশের কম দরিদ্র মানুষ আছে।
সবচেয়ে দরিদ্র বিভাগ রংপুরেও এমন চিত্র দেখা গেছে। ওই বিভাগের ১১টি ধনী উপজেলায় দারিদ্র্যের হার জাতীয় গড়ের নিচে। অন্যদিকে দরিদ্রতম সাত উপজেলায় দারিদ্র্য হার জাতীয় গড়ের দ্বিগুণ। আবার সিলেটে যদিও দারিদ্র্য হার কম, তবু গোয়াইনঘাট উপজেলার ৫০ শতাংশ মানুষই গড় দারিদ্র্য হারের নিচে।
দারিদ্র্য হার বেশি আবার কৃষিকাজে মজুরিও কম—এমন অঞ্চলও চিহ্নিত করা হয়েছে দারিদ্র্য মানচিত্রে। রংপুর, টাঙ্গাইল, যশোর ও ফরিদপুর অঞ্চলে কৃষিকাজে নিয়োজিত ব্যক্তিরা কম মজুরি পান। তাঁদের গড় মজুরির পরিমাণ প্রতিদিন ৮৬ থেকে ১০২ টাকা।
আবার দারিদ্র্যঘন এলাকার মানুষের প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করার হার কেমন, তার একটি চিত্রও তুলে আনা হয়েছে মানচিত্রে। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা বান্দরবান, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, জামালপুর, শেরপুর, গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামের।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান। বিবিএসের মহাপরিচালক গোলাম মোস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব নজিবুর রহমান, ডব্লিউএফপির এদেশীয় পরিচালক ক্রিস্টা রেডার এবং বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ সালমান জায়েদী।
-

Latest

Popular Posts

Popular Posts

Popular Posts