ঢাকা
মহানগর এলাকায় প্রতিদিন এক হাজার ৪১৮ জন মানুষ বাড়ছে৷ বছরে যুক্ত হচ্ছে
গড়ে পাঁচ লাখ সাড়ে ১৭ হাজার মানুষ৷ এই হারে জনসংখ্যা বাড়তে থাকলে সাত
বছর পর ঢাকায় জনসংখ্যা দুই কোটি ছাড়িয়ে যাবে৷ বাংলাদেশ পরিসংখ্যান
ব্যুরো (বিবিএস) এবং জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের
(নিপোর্ট) বিশ্লেষণে এ তথ্য পাওয়া গেছে৷
নিপোর্টের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় বর্তমানে এক কোটি ৬৪ লাখ মানুষ বাস করছে৷ আর সারা দেশে জনসংখ্যা এখন ১৫ কোটি ৬২ লাখ৷ দেশে জনসংখ্যা বছরে ১ দশমিক ৩৭ শতাংশ হারে বাড়লেও শহর এলাকায় এই হার ৪ দশমিক ১৬ শতাংশ৷ তবে চট্টগ্রাম, খুলনা ও রাজশাহী—এই তিন প্রধান শহরে বর্তমানে যত মানুষ বাস করে, তার চেয়ে বেশি মানুষ গত ১৩ বছরে বেড়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায়৷ এই সংখ্যাটি ৬৭ লাখ৷
মানুষের সঙ্গে বাড়ছে যানবাহনও৷ বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ বলছে, ঢাকায় নিবন্ধিত যানবাহন সাত লাখ ৯৭ হাজার ১৮৪টি৷ প্রতিদিন রাস্তায় নামছে ১৮০টি নতুন যান৷ কিন্তু যানজট কমছে না৷ আছে পানির সমস্যা৷ ওয়াসা সূত্র জানিয়েছে, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ এলাকায় সর্বোচ্চ এক কোটি ৩০ লাখ মানুষকে প্রতিদিন পানি সরবরাহ করে তারা৷ বাকি মানুষ কীভাবে পানির প্রয়োজন মেটায়, তা ওয়াসার জানা নেই৷ এককথায় শহরে নাগরিক সেবা তলায় ঠেকেছে৷ সাত বছর পর জনসংখ্যা দুই কোটি ছাড়িয়ে গেলে নাগরিক দুর্ভোগ আরও বাড়বে৷
নগর গবেষক ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলামের মতে, ঢাকার বহুমুখী সংকট এক দিনে সৃষ্টি হয়নি৷ ঢাকার ভবিষ্যৎ নিয়ে শীর্ষ পর্যায়ে চিন্তাভাবনার অস্বচ্ছতা, পরিকল্পনা প্রণয়নে সময়ক্ষেপণ ও বাস্তবায়নে অনীহা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দুর্বলতা, রাজনৈতিক অস্থিরতা, নগর প্রশাসনে বিকেন্দ্রীকরণে অনিচ্ছা এবং সম্পদের অপ্রতুলতা ও অপব্যবহার এই সংকট তৈরি করেছে৷
এই সমস্যা সমাধানের উপায় কী? দুইভাবে সমস্যা মোকাবিলার উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন জনবিজ্ঞানী ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নূর-উন-নবী৷ প্রথমত, ঢাকার বাইরে মানসম্পন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে৷ বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট-সংযোগ প্রত্যন্ত এলাকায় পৌঁছে দিতে হবে, যেন আউটসোর্সিংয়ের কাজে গ্রামের যুবশক্তিও যুক্ত হতে পারে৷ জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোকে সমৃদ্ধ করতে হবে৷ দ্বিতীয়ত, ঢাকার নাগরিক সুবিধা বাড়াতে হবে৷
ইতিমধ্যে বিশ্বে বসবাসের সবচেয়ে অযোগ্য শহর হিসেবে ঢাকা পরিচিতি পেয়েছে৷ গত জানুয়ারিতে যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য ছিল৷ স্থিতিশীলতা, স্বাস্থ্যসেবা, সংস্কৃতি ও পরিবেশ, শিক্ষা ও অবকাঠামো—এই পাঁচটি বিষয়ে ৩০টি সূচক ধরে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়৷ সেখানে ১৪০টি শহরের মধ্যে সবচেয়ে অযোগ্য শহর হিসেবে বিবেচিত হয় ঢাকা৷
কেন ঢাকায় আসছে মানুষ: নিপোর্টের জ্যেষ্ঠ গবেষক সুব্রত ভদ্র বলেন, সুযোগ-সুবিধার আকর্ষণে মানুষ ঢাকায় চলে আসছে৷ একে বলা হয় ‘পুল ফ্যাক্টর’৷ আবার নদীভাঙনের মতো ঘটনায় মানুষ সব হারিয়ে বাধ্য হয়ে ঢাকায় আসছে৷ একে বলা হয় ‘পুস ফ্যাক্টর’৷ তিনি বলেন, ‘মানুষ শিক্ষার জন্য আসছে, ভিক্ষার জন্যও আসছে।’
সারা দেশে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ৮২টি৷ এর মধ্যে ৬০টি ঢাকা শহরে৷ সারা দেশে মোট ৭৫টি সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের মধ্যে ২৮টি ঢাকা শহরে৷ শুধু সংখ্যার বিচারে নয়, মানের দিক থেকেও দেশের সেরা স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় এই শহরে কেন্দ্রীভূত৷ বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে দেশের স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় এক কোটি সাত লাখ ৭৩ হাজারের কিছু বেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে৷ এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৩০ লাখ ৩০ হাজার (২৮ শতাংশ) শিক্ষার্থী ঢাকা বিভাগে৷
অধ্যাপক নজরুল ইসলাম ঢাকাকে বলছেন সুযোগের শহর (সিটি অব অপরচুনিটি)৷ তাঁর মতে, ১৮ লাখ পোশাকশ্রমিক, ১০ লাখ নির্মাণশ্রমিক এবং পাঁচ লাখ রিকশাচালকের জীবিকার সুযোগ করে দিয়েছে ঢাকা৷
নাগরিক সুবিধা বাড়ছে না: সরকারি হিসাবে ঢাকায় নিবন্ধিত যানবাহনের সংখ্যা (মার্চ ২০১৪ পর্যন্ত) সাত লাখ ৯৭ হাজার ১৮৪টি৷ এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মোটরসাইকেল (তিন লাখ ১১ হাজার), প্রাইভেট কার (এক লাখ ৯৫ হাজার), মাইক্রোবাস (সাড়ে ৫৫ হাজার), ট্রাক (৩৯ হাজার), পিকআপ (৩৯ হাজার ৪০০), জিপ (২৩ হাজার ৮০০), বাস (২০ হাজার ৮০০)৷ গত চার বছরের (২০১০-২০১৩ সাল) তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রতিদিন ১৮০টি নতুন যান রাজপথে নামছে৷ কিন্তু নগরের মানুষের পরিবহন সমস্যা দূর হচ্ছে না, যানজট বাড়ছেই৷
একই সঙ্গে পানির সংকটও দিন দিন বাড়ছে৷ ওয়াটার এইডের এ দেশীয় প্রতিনিধি খায়রুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, পানি সবাই পাচ্ছে৷ প্রশ্ন হলো, পরিমাণমতো ও মানসম্পন্ন পানি সবাই পাচ্ছে কি না৷ তাঁর মতে, মানসম্পন্ন প্রয়োজনীয় পানির অভাবে আছে শহরের কয়েক লাখ মানুষ৷
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই শহরের অন্যতম প্রধান সমস্যা আবাসন৷ ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ মানুষ বস্তিতে বাস করে৷ অর্থাৎ প্রায় ৫০ লাখ মানুষ ঘিঞ্জি পরিবেশে বাস করে৷ তাদের সুপেয় পানির সরবরাহ, স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ও গোসলের ব্যবস্থা নেই৷
নিপোর্টের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় বর্তমানে এক কোটি ৬৪ লাখ মানুষ বাস করছে৷ আর সারা দেশে জনসংখ্যা এখন ১৫ কোটি ৬২ লাখ৷ দেশে জনসংখ্যা বছরে ১ দশমিক ৩৭ শতাংশ হারে বাড়লেও শহর এলাকায় এই হার ৪ দশমিক ১৬ শতাংশ৷ তবে চট্টগ্রাম, খুলনা ও রাজশাহী—এই তিন প্রধান শহরে বর্তমানে যত মানুষ বাস করে, তার চেয়ে বেশি মানুষ গত ১৩ বছরে বেড়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায়৷ এই সংখ্যাটি ৬৭ লাখ৷
মানুষের সঙ্গে বাড়ছে যানবাহনও৷ বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ বলছে, ঢাকায় নিবন্ধিত যানবাহন সাত লাখ ৯৭ হাজার ১৮৪টি৷ প্রতিদিন রাস্তায় নামছে ১৮০টি নতুন যান৷ কিন্তু যানজট কমছে না৷ আছে পানির সমস্যা৷ ওয়াসা সূত্র জানিয়েছে, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ এলাকায় সর্বোচ্চ এক কোটি ৩০ লাখ মানুষকে প্রতিদিন পানি সরবরাহ করে তারা৷ বাকি মানুষ কীভাবে পানির প্রয়োজন মেটায়, তা ওয়াসার জানা নেই৷ এককথায় শহরে নাগরিক সেবা তলায় ঠেকেছে৷ সাত বছর পর জনসংখ্যা দুই কোটি ছাড়িয়ে গেলে নাগরিক দুর্ভোগ আরও বাড়বে৷
নগর গবেষক ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলামের মতে, ঢাকার বহুমুখী সংকট এক দিনে সৃষ্টি হয়নি৷ ঢাকার ভবিষ্যৎ নিয়ে শীর্ষ পর্যায়ে চিন্তাভাবনার অস্বচ্ছতা, পরিকল্পনা প্রণয়নে সময়ক্ষেপণ ও বাস্তবায়নে অনীহা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দুর্বলতা, রাজনৈতিক অস্থিরতা, নগর প্রশাসনে বিকেন্দ্রীকরণে অনিচ্ছা এবং সম্পদের অপ্রতুলতা ও অপব্যবহার এই সংকট তৈরি করেছে৷
এই সমস্যা সমাধানের উপায় কী? দুইভাবে সমস্যা মোকাবিলার উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন জনবিজ্ঞানী ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নূর-উন-নবী৷ প্রথমত, ঢাকার বাইরে মানসম্পন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে৷ বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট-সংযোগ প্রত্যন্ত এলাকায় পৌঁছে দিতে হবে, যেন আউটসোর্সিংয়ের কাজে গ্রামের যুবশক্তিও যুক্ত হতে পারে৷ জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোকে সমৃদ্ধ করতে হবে৷ দ্বিতীয়ত, ঢাকার নাগরিক সুবিধা বাড়াতে হবে৷
ইতিমধ্যে বিশ্বে বসবাসের সবচেয়ে অযোগ্য শহর হিসেবে ঢাকা পরিচিতি পেয়েছে৷ গত জানুয়ারিতে যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য ছিল৷ স্থিতিশীলতা, স্বাস্থ্যসেবা, সংস্কৃতি ও পরিবেশ, শিক্ষা ও অবকাঠামো—এই পাঁচটি বিষয়ে ৩০টি সূচক ধরে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়৷ সেখানে ১৪০টি শহরের মধ্যে সবচেয়ে অযোগ্য শহর হিসেবে বিবেচিত হয় ঢাকা৷
কেন ঢাকায় আসছে মানুষ: নিপোর্টের জ্যেষ্ঠ গবেষক সুব্রত ভদ্র বলেন, সুযোগ-সুবিধার আকর্ষণে মানুষ ঢাকায় চলে আসছে৷ একে বলা হয় ‘পুল ফ্যাক্টর’৷ আবার নদীভাঙনের মতো ঘটনায় মানুষ সব হারিয়ে বাধ্য হয়ে ঢাকায় আসছে৷ একে বলা হয় ‘পুস ফ্যাক্টর’৷ তিনি বলেন, ‘মানুষ শিক্ষার জন্য আসছে, ভিক্ষার জন্যও আসছে।’
সারা দেশে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ৮২টি৷ এর মধ্যে ৬০টি ঢাকা শহরে৷ সারা দেশে মোট ৭৫টি সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের মধ্যে ২৮টি ঢাকা শহরে৷ শুধু সংখ্যার বিচারে নয়, মানের দিক থেকেও দেশের সেরা স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় এই শহরে কেন্দ্রীভূত৷ বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে দেশের স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় এক কোটি সাত লাখ ৭৩ হাজারের কিছু বেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে৷ এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৩০ লাখ ৩০ হাজার (২৮ শতাংশ) শিক্ষার্থী ঢাকা বিভাগে৷
অধ্যাপক নজরুল ইসলাম ঢাকাকে বলছেন সুযোগের শহর (সিটি অব অপরচুনিটি)৷ তাঁর মতে, ১৮ লাখ পোশাকশ্রমিক, ১০ লাখ নির্মাণশ্রমিক এবং পাঁচ লাখ রিকশাচালকের জীবিকার সুযোগ করে দিয়েছে ঢাকা৷
নাগরিক সুবিধা বাড়ছে না: সরকারি হিসাবে ঢাকায় নিবন্ধিত যানবাহনের সংখ্যা (মার্চ ২০১৪ পর্যন্ত) সাত লাখ ৯৭ হাজার ১৮৪টি৷ এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মোটরসাইকেল (তিন লাখ ১১ হাজার), প্রাইভেট কার (এক লাখ ৯৫ হাজার), মাইক্রোবাস (সাড়ে ৫৫ হাজার), ট্রাক (৩৯ হাজার), পিকআপ (৩৯ হাজার ৪০০), জিপ (২৩ হাজার ৮০০), বাস (২০ হাজার ৮০০)৷ গত চার বছরের (২০১০-২০১৩ সাল) তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রতিদিন ১৮০টি নতুন যান রাজপথে নামছে৷ কিন্তু নগরের মানুষের পরিবহন সমস্যা দূর হচ্ছে না, যানজট বাড়ছেই৷
একই সঙ্গে পানির সংকটও দিন দিন বাড়ছে৷ ওয়াটার এইডের এ দেশীয় প্রতিনিধি খায়রুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, পানি সবাই পাচ্ছে৷ প্রশ্ন হলো, পরিমাণমতো ও মানসম্পন্ন পানি সবাই পাচ্ছে কি না৷ তাঁর মতে, মানসম্পন্ন প্রয়োজনীয় পানির অভাবে আছে শহরের কয়েক লাখ মানুষ৷
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই শহরের অন্যতম প্রধান সমস্যা আবাসন৷ ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ মানুষ বস্তিতে বাস করে৷ অর্থাৎ প্রায় ৫০ লাখ মানুষ ঘিঞ্জি পরিবেশে বাস করে৷ তাদের সুপেয় পানির সরবরাহ, স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ও গোসলের ব্যবস্থা নেই৷